কলকাতা মেডিক্যাল, বাঙুরে বৃদ্ধি পাচ্ছে সুস্থ হওয়ার হার
রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও বাঙুর হাসপাতালের পরিসংখ্যান আশার আলো দেখাচ্ছে।
গত ৬ মে করোনা হাসপাতাল হিসাবে পথ চলা শুরু করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ পর্যন্ত সেখানে মোট ৯৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা সন্দেহভাজন এবং সারি রোগীর সংখ্যা ৫০১ জন। সুপার স্পেশালিটি ব্লকে করোনা পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যাটা হল ৪৪১। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪৭ জনের। মৃতদের তালিকায় সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) এবং করোনা— দু’ধরনের রোগীই রয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন ৩০৬ জন।
পরিসংখ্যান বলছে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন অন্তত ৫৭ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে একই মাপকঠিতে কোভিড হাসপাতালে মৃত্যুর হার ৪.৯৪ শতাংশ, এটাও সত্যি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজি এই পরিসংখ্যানের কারণ ব্যাখ্যায় জানান, একেবারে শেষ মুহূর্তে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের সরকারি কোভিড হাসপাতালে বেসরকারি নার্সিংহোম, হাসপাতাল থেকে রেফার করা হচ্ছে।
এই তত্ত্বকে মান্যতা দিয়েও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে এম আর বাঙুরের কর্মপদ্ধতির প্রশংসা না করে পারছেন না স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকেরা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত কোভিড এবং সারি মিলিয়ে প্রায় ২৩০০ রোগী এম আর বাঙুরে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে প্রায় ১৯০০ রোগী বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া কিছু রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হয়েছে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোভিড রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ৭০-৭২ জনের মতো।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, ৩০ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত বাঙুরে একজন রোগীরও মৃত্যু হয়নি।
খারাপ রোগীদের চিকিৎসায় বাঙুর যেভাবে ‘ক্যুইক রেসপন্স টিম’(কিউআরটি) তৈরি করেছে তা প্রশংসনীয় বলে মত তাঁদের। দফতর সূত্রে খবর, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন চিকিৎসক, নার্সদের নিয়ে ২২ জনের একটি কিউআরটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ডে রাউন্ড দেওয়ার সময় কোন রোগীদের শারীরিক অবস্থা খারাপ বা অবনতি হতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করছেন চিকিৎসকেরা। তা থেকে কোন রোগীদের শারীরিক অবস্থার উপরে প্রতিনিয়ত নজরদারি জরুরি তা চিহ্নিত করছে কিউআরটি।
রোগীর পরিজনদের অভিযোগ নিরসনেও বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছেন এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পরিজনদের মধ্যে কেউ কোয়রান্টিন বা কেউ কন্টেনমেন্ট জ়োনে আছেন। এখন ফোনে সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা আশ্বস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া রোগী সহায়কদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। পরিজনেরা ভাবছিলেন আচমকা কীভাবে তাঁদের রোগীর মৃত্যু হল!’’ এখন প্রয়োজনে সঙ্কটজনক রোগীদের ক্ষেত্রে পরিজনদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার দায়িত্বও পালন করছেন চিকিৎসকেরা।