১১ সপ্তাহে শহরে সর্বনিম্ন বেকারত্ব
সারা দেশে প্রথম দফার আনলকডাউন শুরু হতেই তার প্রভাব পড়েছে কাজের বাজারে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহেই দেশে বেকারত্বের হার অনেকটা কমেছে। এই তথ্য জানা গিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং অফ ইন্ডিয়ান ইকনমি’র (সিএমআইই) পরিসংখ্যান থেকে। সিএমআইই’র তথ্য অনুযায়ী, ৭ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১৭.৫১ শতাংশ, যা মে মাসের শেষ সপ্তাহে ছিল ২০.১৯ শতাংশ।
লকডাউনের শিকল শিথিল করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানায় উৎপাদন, যানবাহন চলাচল শুরু হতেই কর্মী চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে যার প্রতিফলন ঘটেছে বেকারত্বের পরিসংখ্যানে। শহরে বেকারত্বের হার গত মাসের (শেষ সপ্তাহে) ২৫.১৪ শতাংশ থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে ৭ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে দাঁড়িয়েছে ১৭.০৮ শতাংশ। তুলনায়, গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব ততটা কমেনি — ১৯.৯২ শতাংশ থেকে সামান্য কমে হয়েছে ১৭.৭১ শতাংশ।
গত ২৩ মার্চ থেকে এই প্রথম শহরে বেকারত্বের হার (১৭.০৮ শতাংশ) গোটা দেশের (১৭.৫১ শতাংশ) এবং গ্রামাঞ্চলে বেকারত্বের (১৭.৭১ শতাংশ) থেকে কমল এবং এ মাসের আগামী সপ্তাহগুলিতেও ওই হার আরও কমবে বলে মনে করছে সিএমআইই। কেননা, ৮ জুন থেকে রেস্তোরাঁ, শপিং মল, হোটেল প্রভৃতি শ্রম-নির্ভর ব্যবসাগুলি খুলছে।
সিএমআইই’র তথ্য অনুযায়ী, ৭ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশের শহরগুলিতে বেকারত্বের হার গত ১১ সপ্তাহে সবচেয়ে কম। গোটা লকডাউন পর্বে দেশের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার ৩০.৯৩ শতাংশ থেকে ২১.৪৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে।
কিন্তু, লকডাউন ও আর্থিক সঙ্কটের জেরে বহু ছোট ও মাঝারি শিল্প সংস্থা ব্যবসা বন্ধ করতে পারে অথবা কর্মী ছাঁটাই করতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদ মহলের একাংশের। তাঁদের যুক্তি, সেই কারণে শহরে বেকারত্বের হার কিছুদিন পর আর খুব বেশি কমবে না। পাশাপাশি, খারিফ চাষের মরসুম শেষ হয়ে গেলেই একশো দিনের কাজ প্রকল্পের আওতায় কাজের চাহিদা বাড়বে।
অর্থনীতির অধ্যাপক প্রবীণ ঝা বলেন, ‘২০ এপ্রিল থেকে লকডাউন শিথিল করে এলাকা বিশেষে কিছু কিছু দোকান-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পসংস্থাকে কারখানা খোলার অনুমতি দেওয়ার কারণে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে আরও বেশি সংখ্যায় ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিষেবা খুলতে শুরু করায় কর্মী নিয়োগ বাড়ছে।’
তবে, তাঁর হুঁশিয়ারি, বেকারত্বের এই পরিসংখ্যান দেখে এখনই এটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয় যে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। গ্রামে ও শহরে প্রচুর ছদ্মবেকারত্ব রয়েছে এবং অনেক সময়ই সেই ছদ্মবেকারত্বের আড়ালে দারিদ্র্য ঢাকা পড়ে থাকে।
সিএমআইই আগে জানিয়েছিল, লকডাউনের জেরে এপ্রিল মাসে ১২ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, মে মাসে ২.১ কোটি কর্মসংস্থান হয়েছে। এর বেশিরভাগটাই এসেছে উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্বভারতের রাজ্যগুলি থেকে যেখানে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বহু মানুষের, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকের, কর্মসংস্থান হয়েছে।