করোনা থেকে হতে পারে স্ট্রোক, বলছেন বিজ্ঞানীরা
বাড়ছে সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে উপসর্গও। করোনা আক্রান্ত হলে স্বাদ-গন্ধ বিচারের ক্ষমতা চলে যাওয়া, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি বিভিন্ন অদ্ভুত লক্ষণের কথা ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে।
সংক্রামিতদের একাংশের নিউমোনিয়া এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট (এআরডিএস) হওয়াও এখন কঠিন বাস্তব। চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়িয়ে এবার সেই তালিকায় সংযোজিত হল স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো মারাত্মক অসুখ। সম্প্রতি ‘রেডিওলজি’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
ইতালির ব্রেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন পিডমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও সাসারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ৭২৫ জন করোনা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। যাঁদের মধ্যে ১৫ শতাংশেরই স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, ৯৯ শতাংশ রোগীর সিটি স্ক্যান করা হয়।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, স্নায়ুর সমস্যায় ভোগা রোগীদের ৫৯ শতাংশই ‘অলটার্ড মেন্টাল স্টেট’ নামক সমস্যায় আক্রান্ত হন। এটি আসলে বিভিন্ন ধরনের স্নায়ুরোগের উপসর্গের সমষ্টি। এর মধ্যে ধন্দ, বিকার, কোমা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এরপরই চলে আসে হৃদরোগের সম্ভাবনা। দেখা গিয়েছে, করোনা থেকে স্নায়ুর সমস্যায় ভোগা রোগীদের প্রায় ৩১ শতাংশ ইস্কিমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন। কিছু রোগীর খিঁচুনি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি লক্ষণও দেখা দেয়। এই রোগীর অনেকেরই উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, সেরিব্রোভাস্কুলার ডিজিজের মতো এক বা একাধিক ক্রনিক অসুখ ছিল।
যদিও সার্স-কোভ-২ বা করোনা ভাইরাস সরাসরি মস্তিষ্কের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে কি না, তা এই গবেষণা থেকে পরিষ্কার হয়নি। তবে, করোনায় গুরুতর অসুস্থদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই স্নায়ুর বিভিন্ন উপসর্গের উৎপত্তি হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু রোগীর শরীরে ‘সাইটোকাইন ঝড়’ দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান সাইটোকাইন তৈরি হয়। ফলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। যার ফলস্বরূপ হৃদরোগের আশঙ্কাও বাড়ে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড-১৯-এর লক্ষণ হিসেবে স্নায়ুর সমস্যাগুলিকে খুব বেশি আমল দেওয়া হয় না। যদিও সমস্যাগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। তাই প্রাথমিক স্তরে লক্ষণগুলিকে চিহ্নিত করতে পারলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।