গনেশ পাইন – রং তুলির রাজা সম্পর্কে কিছু অজানা কথা
বাংলা তথা ভারতের আকাশে, এক স্বতন্ত্র গরিমায় উজ্জ্বল নক্ষত্র, গণেশ পাইন। তাঁকে বাংলা মনে রাখবে, অবচেতন মনের, রোমান্টিক প্রকৃতির ছবির দ্রষ্টা হিসাবে। মানুষের মনে ঘোরে যে স্বপ্ন চাপা থাকে তাকে তিনি তুলে এনেছেন ক্যানভাস ও কাগজের পটে।
জন্ম কলকাতায় এবং জীবনের মধ্য ভাগ পেরিয়ে কিছু দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি৷ তবু গণেশ পাইনের শিল্প-মানস পশ্চিমি শিল্প এবং ভারতীয় শিল্পের সংমিশ্রণে উজ্জ্বল৷ কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজে তাঁর শিল্পশিক্ষা৷ মাত্র কুড়ি বছর বয়সেই, ১৯৫৭ সালে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এ সিপাহী বিদ্রোহের শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনীতে ঠাঁই পায় তাঁর ছবি৷ গণেশ পাইনের শিল্প-অভিসার এক ভারতীয়ের স্বকীয়তার সন্ধানে, আত্মপরিচয়ের সন্ধানে যাত্রা৷ সেই যাত্রা বজায় ছিল তাঁর জীবনের অন্তিম পর্ব পর্যন্ত৷
১৯৫৫-য় রবীন্দ্রনাথের বিপুল প্রদর্শনী দেখছেন তিনি৷ তার কয়েক বছর পরেই মুগ্ধ হচ্ছেন অবনীন্দ্রনাথের এক বিশাল প্রদর্শনী দেখে৷ পাশাপাশি সরকারি আর্ট কলেজে তো বটেই এবং তার পরেও পাশ্চাত্য শিল্পও ছাপ ফেলে যাচ্ছে তাঁর মনে৷ রেমব্রান্ট অথবা পল প্লি যেমন, তেমনই অ্যানিমেশন ছবির নানা চরিত্র টানছে তাঁকে৷ এমন বহুমুখী শিল্পভাষার দেওয়া-নেওয়ায় নির্মিত হচ্ছে তাঁর নিজস্ব ধারা৷
১৯৬৮-তে নয়াদিল্লির আন্তর্জাতিক ত্রিয়েনাল, সে বছরই প্রাগে বিশ্বযুব উত্সবে যাচ্ছে তাঁর ছবি, ১৯৭০-এ জার্মানি, লন্ডনে রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ আর্টস, প্যারিস দিয়েনালে উপস্থিত গণেশ পাইনের ছবি৷ অর্থাত্ , চার দেওয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্য জুড়ে যে ছবি, তার নির্ভুল আন্তর্জাতিক ইশারা পৌঁছে যাচ্ছে সারা বিশ্বের শিল্পরসিকদের কাছে৷ আশ্চর্য নয়, সেই সময় মকবুল ফিদা হুসেন তাঁকে (এবং বিকাশ ভট্টাচার্যকে) অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পীর শিরোপায় ভূষিত করেছেন৷
অতঃপর গণেশ পাইনের ছবি এবং খ্যাতি ছড়িয়েছে দিগন্তরে৷ কী ভাবে তাঁর ছবি তৈরি হয়ে ওঠে, সেই অন্তর্মহলটিও কম বিস্ময়কর নয়৷ যে ভাবে তিনি ছবির পরিকল্পনা করেন, রেখায় এবং লেখায়, সেই দিকেও দৃষ্টিপাত করেছেন চিত্রমোদীরা৷ গণেশ পাইনের ‘জটিংস’ নিয়ে একক প্রদর্শনীও হয়েছে৷ দেশ-বিদেশের সংগ্রাহকেরা এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দুয়ারে৷ গণেশ পাইন তাঁর শিল্পভাষা থেকে চ্যুত হননি কোনওদিনই৷
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দীর্ঘকাল অবিবাহিত, পরে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন, স্ত্রী নীরার সঙ্গে এক সময় কবিরাজ রো-র পুরনো বাড়ি ছেড়ে উঠে এসেছেন দক্ষিণ কলকাতার প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্টে৷ এইসব বাঁক বদল কি তাঁর চিত্রভাষাতেও ছাপ ফেলেছিল কোনও?
তথ্যসূত্র: এই সময়