কলকাতার বাতাসে বাড়ছে দূষণের মাত্রা
প্রায় আড়াই মাসের লকডাউনে লাগাতার ‘ভালো’র তালিকায় থাকা শহরের বাতাসে আনলক-ওয়ানে ফের মন্দের ছোঁয়া!
লকডাউন অনেকখানি শিথিল হতেই সোমবার থেকে প্রায় পুরোদমে রাস্তায় নেমেছে জনতা। বাস-ট্যাক্সির সংখ্যা তুলনায় কম থাকায় বেড়েছে ছোট গাড়ি, টু-হুইলারের সংখ্যা। সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাজার-দোকানও চালু হয়ে গিয়েছে প্রায় পুরো মাত্রায়। শহরের বাতাসেও লেগেছে তার ছোঁয়া। একেবারে ‘সবুজ’ তালিকায় থাকা শহরের বাতাসে ফের বাড়ছে দূষণের মাত্রা।
সোম ও মঙ্গলবার–চলতি সপ্তাহের প্রথম দু’দিনে বাতাসের দূষণ রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম ১০) ও অতি-সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫)–দু’টিরই মাত্রা তার আগের সপ্তাহের তুলনায় গড়ে প্রতি ঘনমিটারে অন্তত ১০-১৬ মাইক্রোগ্রাম বেড়েছে। পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা-ভীতি ভেঙে যত মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন, ততই দূষণ-মাত্রা ফের বাড়বে। তবে এখনও যেহেতু বাস-মিনিবাস-অটো-ট্যাক্সির সংখ্যা তুলনায় কম এবং মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে, তাই দূষণের প্রভাব অতটা বোঝা যাচ্ছে না। এটা আরও বাড়বে আগামী কয়েক দিনে।
রেকর্ড বলছে, মঙ্গলবার শহরের বাতাসে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২১.৮৯ মাইক্রোগ্রাম, পিএম ১০ ছিল ৪৮.১৯। আগের মঙ্গলবার যখন এত সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নামেননি, তখন এই পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৪.৮৩ এবং ৩৪.৫২ মাইক্রোগ্রাম। শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তর একটি মামলা চলছে জাতীয় পরিবেশ আদালতে। সুভাষ বলেন, ‘রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা লকডাউনের আগের মতো স্বাভাবিক না-হলেও বেড়েছে। আর রাস্তায় পথচারী ও ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ায় যানজটও হচ্ছে। তাতে গাড়ির গতি থমকে যাচ্ছে। সে জন্য দূষণ মাত্রাও আস্তে আস্তে বাড়ছে। স্বাভাবিক জনজীবন বজায় থাকলেও যাতে দূষণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, সেটার জন্যই তো আমাদের সবার লড়াই।’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক তড়িৎ রায়চৌধুরীর ব্যাখ্যা, ‘রাস্তায় যানবাহন, রাস্তার ধারের ছোট হোটেল-রেস্তোরাঁ, যারা এখনও কয়লার উনুন ব্যবহার করে–সে সব এখনও পুরো মাত্রায় চালু হয়নি। তাই দূষণের মাত্রা এখনও ততটা বাড়েনি। এই পরিস্থিতিতে যানবাহনের দূষণ ঠেকানোর জন্য সাইকেলকে বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। কলকাতায় সেই অনুপাতে সাইকেল চলার রাস্তা নেই, সেটাও একটা সমস্যা।’
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মধ্যে আম্পানের প্রভাবে কলকাতা ও শহরতলির প্রচুর গাছ নষ্ট হয়েছে। দূষণমাত্রা বৃদ্ধির এটাও একটা কারণ। তবে একটাই স্বস্তি, সামনেই বর্ষার মরসুম। তাতে বাতাসের দূষণ যেমন কমবে, তেমনই নতুন গাছ লাগালে তার বৃদ্ধিও ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।