দেশ বিভাগে ফিরে যান

শিশু পাচার রোধে সুপ্রিম নজরদারি

June 10, 2020 | 2 min read

লকডাউনের জন্য ক্ষতির মুখে বহু ব্যবসা। তাই, কম মজুরিতে শ্রমিক পেতে কেউ কেউ নাবালক-নাবালিকাদের দিয়ে কাজ করাতে পারে বলে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৯টি রাজ্যকে সতর্ক করল সুপ্রিম কোর্ট।

নাবালকদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালতের আশঙ্কা, লকডাউনে সেই নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না-করার ঘটনা আরও বেশি করে ঘটতে পারে। যে কারণে শ্রমিক জোগান দেওয়া ঠিকাদাররাও সুপ্রিম কোর্টের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী নজরদারির আওতায় চলে এলেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, শিশু পাচার ঠেকাতে দায়ের হওয়া মামলায় সোমবারের শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ৯টি রাজ্যকে যুক্ত করা হয়েছে, সেই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে কেন্দ্রীয় সরকার ও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থাকেও ওই মামলায় যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী, মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে শিশু পাচার নিয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। শিশু পাচার ঠেকাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য আগামী দিনে সুপ্রিম কোর্ট হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করতে চায়। সেই ব্যাপারেও সোমবারের শুনানিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

শিশু পাচার

লকডাউনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও শিশু পাচারের অভিযোগ এসেছে বলে শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে মামলাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন’। এমনকী, সুপ্রিম কোর্টে তাদের অভিযোগ, রাজ্যের বেশ কয়েক জন নাবালিকাকে এই সময়ের মধ্যে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই নাবালিকাকে বিয়ের ব্যবস্থা হয় পাচারের উদ্দেশ্যে। তার পর তাদের যৌন ব্যবসায় সামিল করা হয়। লকডাউনে এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে, এম‌ন আশঙ্কার কথাও ওই মামলায় জানানো হয়েছে।

তবে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর দাবি, ‘লকডাউনে কোনও পাচারের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েক জন নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, এমন অভিযোগ এসেছিল। তার মধ্যে ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই আমরা বিয়ে আটকে দিতে পেরেছি।’ লকডাউনে পাচার বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় শিশু সুরক্ষা কমিশন আগেই সব জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে। এর পাশাপাশি, স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও সিআইডি-র যে বিশেষ বিভাগ পাচার ঠেকানোর জন্য রয়েছে, তাদের সঙ্গেও একাধিক বার বৈঠক করেছে কমিশন।

মানব পাচারে পশ্চিমবঙ্গে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও বসিরহাট পুলিশ জেলায় লকডাউনে এমন কোনও ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের দাবি। যদিও রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘এই সব জায়গায় এতদিন লক ডাউনের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল। সেই জন্য আড়কাঠিরা হয়তো পাচারের সুযোগ পায়নি। কিন্তু এখন গণ পরিবহণ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। কাজেই, সেই সুযোগে এখন ওই কারবার যাতে ফের শুরু না-হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে।’ এই সময়ের মধ্যে দালালরা হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে টোপ দিয়ে, এমনকী অগ্রিম টাকা পর্যন্ত দিয়ে কথা ‘পাকা’ করে রাখতে পারে। তাই, যানবাহন চলতে শুরু করলে তার মাধ্যমে পাচার যাতে না-হয়, সেটা নিশ্চিত করাই এখন জরুরি বলে ওই পুলিশ আধিকারিকদের বক্তব্য। অগ্রিম টাকা পরিবারের হাতে দিয়ে দালালরা শিশুদের পাচারের ব্যবস্থা পাকা করে রাখছে বলে সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সোমবারের শুনানিতেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#child trafficking, #supreme court

আরো দেখুন