কোয়ারান্টিন সেন্টারের সুবন্দোবস্তে খুশি শ্রমিকরা
সকালে লুচি বা ডালপুরি-তরকারি কিংবা পাউরুটি আর কলা। দুপুরে ভাত-ডাল-সয়াবিনের বড়ির তরকারি কিংবা মরসুমি শাকসব্জি, ডিমের ঝোল। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মাছ বা মাংস। কোনও কোনও দিন আবার কাঁচা আমের চাটনিও। রাতে ভাত বা রুটি-সব্জি, সঙ্গে মাছ বা মাংস।
না, কোনও ক্যান্টিন বা হোটেলের মেনু নয়। ওল্ড মালদা পুরসভা পরিচালিত একমাত্র কোয়ারান্টিন সেন্টারে থাকা ৮৩ জন শ্রমিক-আবাসিকের রোজকার খাদ্য তালিকা!
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তো বটেই, মালদা জেলারও বেশ কয়েকটি কোয়ারান্টিন সেন্টারে যখন থাকাখাওয়ার অব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ উঠছে, এই কোয়ারান্টিন সেন্টারে অন্য রকম বন্দোবস্ত।
কিছু দিন আগেই মানিকচকের কোয়ারান্টিন সেন্টার ভাঙচুর হয়েছে, হরিশচন্দ্রপুর হাইস্কুলে চালু হওয়া কোয়ারান্টিন সেন্টার ছেড়ে সেখানকার সব আবাসিক বাড়ির পথ ধরেছেন চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে। সেখানে ওল্ড মালদার এই কোয়ারান্টিন সেন্টারের আবাসিকদের এখন অন্য কারণে মন খারাপ। কোয়ারান্টিনের ১৪ দিনের মেয়াদ যে শেষ হয়ে আসছে! বাড়ি ফেরার সময় আসন্ন!
লকডাউনের মধ্যে আনলক পর্ব শুরু হতে ওল্ড মালদা পুরসভা এলাকাতেও বাইরে থেকে শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকের পক্ষেই হোম কোয়ারান্টিনে থাকা সম্ভব নয়, কারণ বাড়িতে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা নেই। সে কথা মাথায় রেখেই ওল্ড মালদা পুরসভার পক্ষে তাঁদের জন্য কোয়ারান্টিন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মাধাইপুরে একটি বেসরকারি বিএড কলেজের ক্যাম্পাসে। দীর্ঘদিন বাড়ি থেকে দূরে থাকা, লকডাউনে কাজ হারিয়ে দুঃসহ জীবন কাটিয়ে জেলায় ফেরা শ্রমিকরাও চার ধারের বিস্তৃত সবুজের মাঝে এই কোয়ারান্টিন সেন্টারকেই আপন করে নিয়েছেন। সেখানকার স্বাচ্ছন্দ্য ও সুব্যবস্থার জন্য।
১ জুন ২৭ জন পরিযায়ী শ্রমিককে নিয়ে শুরু হওয়া এই কোয়ারান্টিন সেন্টারে এখন আবাসিকের সংখ্যা ৮৩।
ওই কোয়ারান্টিন সেন্টারে জেলায় ফিরে আসা শ্রমিকদের খাওয়াদাওয়ার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় একটি ক্লাবের কর্মকর্তা শ্রবণ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘কেবল রান্নার জন্যই রয়েছে ১৪ জনের একটি টিম। রোজকার রুটিন মেনে খাবার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সেন্টারের ভিতরকার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সব চলছে। ১৪ দিন পর সেন্টার বন্ধ করা যাবেনা সেটা বুঝে গিয়েছি। পুরসভার ছাতা মাথার উপর আছে বলে সবটা ঠিক ভাবে করা যাচ্ছে।’
পুরসভার নোডাল অফিসার সাধন দাসের বক্তব্য, ‘ভিন রাজ্য থেকে ফেরা ৮৩ জনের সোয়াব টেস্ট আমরা করেছি ৯ দিনের মাথায়। সেই নমুনা মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন রিপোর্ট আসার অপেক্ষা।’
অথচ শুরুটা সহজ ছিল না। পুর প্রশাসক কার্তিক ঘোষের কথায়, ‘পুরসভা এলাকায় কোয়ারান্টিন সেন্টার করলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে, সেটা বুঝে শহর থেকে দূরে এই সেন্টারটা করেছিলাম। ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব কাজ কেবল পুর কর্তৃপক্ষের হাতে না-রেখে স্থানীয় ক্লাব ও উদ্যোগীদেরও যুক্ত করায় কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।’ কার্তিক বলেন, ‘আবাসিকদের বোঝাতে পেরেছি, অস্থায়ী হলেও নিজের এই আবাসকে সুন্দর করে রাখতে হবে। তারও ফল মিলেছে। এখন একটাই প্রত্যাশা, সবাই সুস্থ অবস্থায় দ্রুত বাড়ি ফিরুন।’
ওল্ড মালদা পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়দেব দাস মহারাষ্ট্র থেকে ফিরে এই কোয়ারান্টিন সেন্টারে আছেন। কোয়ারান্টিন সেন্টারের দরজার ও পার থেকে বললেন, ‘বাড়িতে এই ভাবে নিয়ম মেনে থাকার অবস্থা নেই। তাই, আমরা অনেকেই চাইছি, ১৪ দিন নয়, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই বাড়ি যাব।’