হাইকোর্টে এজলাস বসল, তবে আইনজীবী এলেন না
হাতে গোনা কয়েকটি এজলাস বসেছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতেই ধাক্কা খেল ৮০ দিন পর ফের হাইকোর্টে ফিজিক্যাল হিয়ারিং শুরুর পরিকল্পনা। আইনজীবীদের তিনটি সংগঠন এখনই এজলাসে শুনানিতে আপত্তি জানিয়ে কাজে যোগ না-দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রইল। সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গুটিক’য় আইনজীবী হাজির হন কোর্ট চত্বরে। তবে বেশির ভাগই সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে সাহস করেননি। এমনকী যাঁরা হাজির হয়েছিলেন, তাঁরাও অনেকে পড়ে যান দ্বিধায়। এমনকী সরকারপক্ষের তরফেও বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্তের উল্লেখে প্রধান বিচারপতির এজলাসে হাজির না-থাকার যুক্তি দেওয়া হয়। ফলে মুষ্টিমেয় কয়েক জন এজলাসে সরাসরি শুনানিতে হাজির হলেও বেশির ভাগ এজলাসেই তালিকাভুক্ত বহু মামলার শুনানিহতে পারেনি।
এই অবস্থায় আজ, শুক্রবার আইনজীবীদের তিনটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের কথা প্রধান বিচারপতির। সংগঠনগুলির দাবি, প্রধান বিচারপতির তরফে আজ বেলা ১২টায় সংগঠনগুলির প্রধানদের হাইকোর্টে ডাকা হয়েছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ধীরজ ত্রিবেদী বলেন, ‘আমরাই চিঠি দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছিলাম। আদালত আলোচনা চাওয়ায় আমরা যাব।’ যদিও বার লাইব্রেরির সম্পাদক প্রমিত রায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘এখনও এমন কোনও বৈঠকের চিঠি পাইনি। আর এর আগে তিনটি বৈঠক ভিডিয়ো কনফারেন্সে হওয়ার পর যে ফিজিক্যাল কোর্ট চালানো নিয়ে বিতর্ক, তার মধ্যে কি করে সামনাসামনি বৈঠক ডাকা হয়, সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।’
এই ডামাডোলের মধ্যেই বৃহস্পতিবার ফিজিক্যাল কোর্ট চালুর ঘোষণায় কয়েক জন আইনজীবী সকাল সকাল হাজির হন হাইকোর্টে। মূলত সাদা জামা পরে, মাস্ক-সহ এসেছিলেন তাঁরা। কেউ কেউ কালো কোট পরলেও আইনজীবীদের জন্য নির্দিষ্ট গাউন পরেননি কেউই। কারণ, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভারী পোশাক পরায় আপাতত ছাড় দিয়েছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। এজলাসে আইনজীবী ও বিচারপতির মধ্যে কাচের দেওয়ালেরও ব্যবস্থা ছিল। এক-একটি শুনানিতে ৬ থেকে ৮ জনের বেশি এজলাসে যাতে প্রবেশ না-ঘটে, তা দেখার জন্যে ছিল পুলিশ। একেবারে প্রবেশপথে ছিল থার্মাল স্ক্রিনিং, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থাও। রং দিয়ে গোল্লা কেটে অলিন্দে দূরত্ববিধি মানার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতির এজলাস ছাড়াও আরও পাঁচটি বেঞ্চ সরাসরি শুনানির জন্য বসে। কিন্তু খুব বেশি মামলার শুনানি হয়নি গরিষ্ঠ সংখ্যক আইনজীবীর গরহাজিরায়।
জুনিয়র আইনজীবীদের অনেকে এবং ল-ক্লার্করা হতাশ হাজিরা এড়ানোর সিদ্ধান্তে। হতাশ বিচারপ্রার্থীদের অনেকেও। আবার রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য আইনজীবী প্রসূন দত্তের অভিযোগ, ‘ফিজিক্যাল কোর্টে আমার মামলা ছিল। কিন্তু আমি সংগঠনের সিদ্ধান্ত মেনে অংশ নিইনি। কিন্তু কয়েক জন আইনজীবী সংগঠনকে উপেক্ষা করে মামলা করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সংগঠনকে অমান্যের প্রবণতা বাড়বে।’ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক ধনধনিয়া বলেন, ‘নির্দিষ্ট নথি-সহ অভিযোগ এলে সিদ্ধান্ত নেব।’