করোনা আতঙ্কেই পর্যটকদের জন্য খুলল দীঘা
মন্দারমণির পর এবার পর্যটকদের জন্য হোটেলের দরজা খুলে গেল দিঘা-শঙ্করপুরেও। বুধবার সন্ধেয় হোটেল মালিক সংগঠনের বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে হোটেল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মাত্র ৩০ শতাংশ হোটেল প্রাথমিক ভাবে খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোটেল মালিক সংগঠন। আড়াই মাস পরে বৃহস্পতিবার থেকে করোনা আতঙ্ক দূরে ঠেলে দিঘাতে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিনের আনলক দিঘায় পর্যটকদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।
দিঘায় ছোট বড় মিলে হোটেলের সংখ্যা প্রায় ৬০০। এর মধ্যে ২০০ হোটেল দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। গত সোমবার থেকে মন্দারমণি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দিঘা-শঙ্করপুরের হোটেল মালিকদের একাংশ তড়িঘড়ি না করে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করে হোটেল খোলার বিষয়ে মত দিয়েছিলেন। তবে বুধবার সন্ধ্যায় হোটেল মালিক সংগঠনের বৈঠকে বৃহস্পতিবার থেকে হোটেল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে, আপাতত দিঘায় ৩০ শতাংশ হোটেল খুলবে। আবার যে সব হোটেল খুলবে, তার মোট রুমের ৩০ শতাংশ রুমে পর্যটকরা থাকতে পারবেন। হোটেলে ঢোকার সময় পর্যটকদের থার্মাল স্ক্রিনিং করা হবে। সেই সঙ্গে ব্যাগ সমেত অন্যান্য জিনিস স্যানিটাইজ করা হবে। হোটেলে মাস্ক ও গ্লাভস বাধ্যতামূলক। অসুস্থ বা সর্দি জ্বর হয়েছে এমন পর্যটকদের হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না। হোটেলে থাকার সময় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের সংগঠনভুক্ত হোটেলের ৩০ শতাংশ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। প্রথমে পর্যটকদের কথা ভেবে রাস্তার পাশের কয়েকটি হোটেল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
দিঘাতে হাতে গোনা কয়েকটি হোটেলের দরজা পর্যটকদের জন্যে খুললেও আপাতত বন্ধ থাকছে খাওয়ার হোটেল ও রেস্তোরাঁর দরজা। তাই যে সব হোটেলে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, এমন হোটেলই খুলছে বৃহস্পতিবার থেকে। পর্যটকদের দল বেঁধে সমুদ্র স্নান ও যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়ানোর ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিক সুজন দত্ত বলেন, ‘হোটেল মালিক, কর্মী ও পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর পুলিশকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।’
দিঘার হোটেল খুলেছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বেলার দিকে ছোট গাড়িতে করে কলকাতা, হাওড়া, হলদিয়া থেকে কিছু পর্যটক দিঘা বেড়াতে আসেন। গাড়ি নিয়ে দুই বন্ধুর সঙ্গে দিঘা বেড়াতে এসেছেন গড়িয়ার অনির্বাণ দে। তাঁরা ওল্ড দিঘার একটা হোটেলে উঠেছেন। বললেন, ‘আড়াই মাস ঘরে বসে বসে বোর হয়ে উঠেছিলাম। তাই হোটেল খোলার খবর পেয়ে সোজা দিঘা চলে এসেছি।’ কিন্তু হোটেল খুললেও পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছে সকলে। এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে কত পর্যটক দিঘা বা উপকূল এলাকায় বেড়াতে আসবেন, সেটাই দেখার।’ দিঘা থেকে বাস পরিষেবা চালু হলেও বাসে লোকজন তেমন যাতায়াত করছেন না। ট্রেনও চালু হয়নি। তাছাড়া সামাজিক দূরত্ব মেনে আদৌ বেড়াতে আসবেন কিনা মানুষ, সেটাও বড় প্রশ্ন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অনেক হোটেল মালিক ও কর্মীরা তাড়াহুড়ো করে হোটেল খুলতে চাইছেন না এখনও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে হোটেল মালিককে লোকসানে পড়তে হবে। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, ‘মন্দারমণি হোক বা দিঘা, সব জায়গায় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ও প্রশাসনের নির্দেশ মেনে হোটেল খুলতে বলা হয়েছে। না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’