ইলিশের খোঁজে সাগরে মৎস্যজীবীরা
ঝিরঝিরে বৃষ্টি, সঙ্গে পুবালি হাওয়া, এই সময় ঘরে বসে থাকলে কি চলে? ‘পদ্মানদীর মাঝি’র সেই সংলাপ যেন আপামর মৎস্যজীবীদের জীবনের ধ্রুবসত্য। আকাশ কালো করে মেঘ মানেই ইলিশের ঝাঁক এসে নৌকোয় টোকা দিচ্ছে। কিন্তু, এ বছর করোনা ও উম-পুনের ছোবলে জীবনের স্বাদটাই নোনা হয়ে গিয়েছে। তবুও বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নতুন উদ্দীপনায় সাগরযাত্রার প্রস্তুতি চলছে মৎস্যজীবীদের ঘরে।
৬২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠতে আর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা বাকি। সেই হিসেবে আগামী সোমবার, ১৫ জুন ভোর থেকে মাছ ধরার কাজে নামতে চলেছেন মৎস্যজীবীরা। তবে এবার প্রথম দিনে ট্রলার ও নৌকা মিলিয়ে মেরেকেটে ৫০ শতাংশের কম জলযান নামবে। কারণ হিসেবে মৎস্যজীবীরা জানান, প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞার সময়ের মধ্যে ট্রলারসহ মাছ ধরার সমস্ত জলযান মেরামত হয়। পাশাপাশি পুরনো জাল সেলাই ও নতুন জাল তৈরি হয়। কিন্তু, এবার সে সমস্ত কিছুই হয়নি। তাই মাছ ধরার জন্য সব জলযান একইদিনে নামতে পারছে না।
প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এবার লকডাউন ঘোষণা হয়েছে গত ২৪ মার্চ। ফলে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময়সীমার ২১ দিন আগেই মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যায়। তার জেরে মৎস্য ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ৪০-৫০ হাজারের বেশি মানুষের রুটিরুজি ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ট্রলার মালিক, আড়তদার যাঁরা মৎস্যজীবীদের দাদনে টাকা দিতেন, বাজার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তাঁদেরও কারও হাতে নগদ নেই। ফলে এবার তাঁরাও এই বন্ধের সময়ে ধার দেওয়ার ব্যাপারে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। অর্থের অভাবে ট্রলার মেরামত, নতুন জাল তৈরির সরঞ্জাম কিনতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। তার জেরে ট্রলার ও ইঞ্জিন মেরামত হয়নি। এজন্য সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া সাড়ে ছ’ হাজারের বেশি জলযানের মধ্যে অর্ধেক নামতে পারবে। বাকি ট্রলারগুলি মেরামত হওয়ার পর নামবে। এক ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা বলেন, গতবার ইলিশের মরশুমে আবহাওয়া খারাপ থাকায় রোজগার একেবারে হয়নি। এবারেও লকডাউন ও উম-পুন মাছের ব্যবসাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, সাগর ও কাকদ্বীপ, ঘোড়ামারা, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, রায়দিঘি সহ মৎস্যজীবী অধ্যুষিত এলাকা উম-পুনের ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সেই কারণে মৎস্যজীবীরা এবার অনেকেই বেশি করে অগ্রিম টাকা দাবি করছেন। যা নিয়ে ট্রলার মালিকদের সঙ্গে জোর দর কষাকষি চলছে। মৎস্যজীবীদের কথায়, এ বছর পরিবারের হাতে বেশি টাকা দিতে না-পারলে সাগর পাড়ি দেওয়াই কঠিন হয়ে যাবে।