নবান্ন খুশি ওয়ার্ক ফ্রম হোমে কাজের মান ও গতি বেড়ে যাওয়ায়
কর্মসংস্কৃতির ব্যাপারে অপবাদ, বদনাম, অভিযোগ তাঁদের নিত্যসঙ্গী। তাঁদের বছর ১২ মাসে নয়, ১৮ মাসে- এমনটাই বলা হয়। আর রাজ্য সরকারি কর্মীদের,বিশেষ করে অর্থ দপ্তরের কর্মীদের সেই অপবাদই ঘুচিয়ে দিল ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগে ফাঁকি দেওয়ার বদলে কাজের গতি ও গুণমান বাড়ালেন তাঁরা।
অর্থ দপ্তরকে বলা হয় প্রশাসনের মেরুদন্ড। আবার রাজ্য সরকারি কর্মী ও অফিসারদের সংখ্যা সব মিলিয়ে সাড়ে তিন লক্ষ তাঁদের বেতনের এক রকম চাবিকাঠিও অর্থ দপ্তরের হাতে। বাড়িতে থেকে কাজে সেই অর্থ দফতরের কর্মীরা স্বাস্থ্যকর কর্মসংস্কৃতির নজির গড়ায় খুশি নবান্ন।
সরকারি কর্মীদের কাজের গতি বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশিকা ও বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর। কিন্তু উন্নতি তেমন হয়নি। কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোমে দেখা গেল, প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত কাজ হচ্ছে।
গত আর্থিক বছরের শেষ লগ্নে করোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউন শুরু হয়। অর্থ দপ্তরের কর্মীরা সেই সময় সন্দিহান হয়ে পড়েন এই নিয়ে যে অফিস বন্ধ হওয়ায় কীভাবে বর্ষশেষের হিসেবনিকেশ মিটবে। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে রাজ্য প্রশাসনের। কিন্তু কর্মী ও অফিসারদের অনেকেই
বাড়িতে বসেই ব্যক্তিগত ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোন থেকে ই- অফিসের মাধ্যমে কাজ তুলে দিয়েছেন। যা এক কথায় নজিরবিহীন বলে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদেরই একাংশ মেনে নিচ্ছেন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু হতেই দপ্তরের বহু কর্মী অফিস থেকে পেন ড্রাইভে প্রয়োজনীয় ডেটা তুলে নিয়ে গেছেন। যাতে বাড়ি থেকে ই- অফিস করতে অসুবিধা না হয়।
অর্থবর্ষ শেষ হলেও লকডাউন ওটা তো দূরের কথা উল্টে এসে অাম্ফান আঘাত। ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও পুনর্গঠনের কাজে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে ফের কাজের চাপ বেড়ে যায় অর্থ দপ্তরে। এরই মধ্যে অবশ্য প্রশাসনের উদ্যোগে ভীত সংখ্যক সরকারি অফিসে গুটিকয়েক সরকারি কর্মীকে আনা হয়েছিল। ৮ই জুন থেকে পুরো মাত্রায় সরকারি অফিস চালু হয়। তবে দূরবর্তী এলাকায় থাকা সব সরকারি কর্মী কাজে যোগ দিতে পারেনি। কিন্তু ই- অফিস আছে তো! সরকারি কর্তাদের বক্তব্য, ‘এই ব্যবস্থার একটা বড় সুবিধা হল, এতে জানা যাচ্ছে কার কাছে কোন কাজ কতক্ষণ পড়ে থাকছে। উচ্চপদস্থ অফিসার এর বক্তব্য, ‘অফিসে কর্মীদের অনেকের মধ্যে গয়ংগচ্ছ ভাব কাজ করে। আড্ডা, গল্পে অনেক সময় নষ্ট হয়। বাড়িতে সে সব হয় না। বরং দ্রুত অফিসের কাজ সেরে কর্মী অফিসাররা পরিবারকে। সময় দিতে পারেন’।
অর্থ দপ্তর সূত্রের খবর, কাজের এই গতি দেখেই অর্থ কমিশনার এসকে রাম যে সব কর্মী ও অফিসার ‘ ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন, তাদের নিয়ে তথ্য ভান্ডার তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি ইতি মধ্যেই ওই সব কর্মী ও আধিকারিকদের প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, পদ, কোন সেলে কর্মরত, মোবাইল নম্বর ও ইমেল আইডি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে জমা দিতে বলেছেন।
অর্থ দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের অনেকের বক্তব্য, ‘বাড়িতে থেকেই কর্মীরা দ্রুত গতিতে ও ভালো কাজ করছেন। ই- ফাইল কোনও ভাবে পড়ে থাকছে না। অথচ সাধারণ ফাইল দিনের পর দিন অফিসের টেবিলে পড়ে থাকে । ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবাদে কর্ম সংস্কৃতির ইতিবাচক ভোল বদলের উদাহরণ দিচ্ছেন পুর ও নগর উন্নয়ন দপ্তরের যুগ্ম সচিব অরূপ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, টেন্ডার ডাকা সংক্রান্ত একটি ফাইল অর্থ দপ্তরের অনুমতি নিতে পাঠানো হয়েছিল। স্বাভাবিক সময়ে এই অনুমোদন আসতে দু সপ্তাহ লেগে যায়। লক ডাউনের মধ্যে মাত্র চার দিনে সেই ফাইলের অনুমোদন পাওয়া গেছে অর্থ দপ্তরের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, অরূপ বলছেন, এই চারদিনের মধ্যে আবার দু দিন শনিবার, রবিবার ছিল। অনুমোদন তাড়াতাড়ি পাওয়ার জন্য তাগাদা দিতে একটি বারের জন্যেও অর্থ দপ্তরে ফোন পর্যন্ত করতে হয়নি।’