চীনা সংস্থাকে দেওয়া ৪৭১ কোটির বরাত বাতিল রেলের
চিনকে উচিত শিক্ষা দিতে দেশবাসী যেখানে চিনা পণ্য বয়কটের ডাকে সোচ্চার, ভারত সরকার তখন দেশে চিনা সংস্থাগুলির বিনিয়োগে কড়া নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে। আর, এতেই প্রমাদ গুণতে শুরু করেছে শি জিনপিংয়ের দেশ।
বুধবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারা যেন ফোর-জি পরিষেবা উন্নতি করতে কোনও চিনা সংস্থাকে যন্ত্রাংশের বরাত না দেয় এবং তার জন্য প্রয়োজনে সংস্থাগুলিকে তাদের দরপত্রের শর্ত সংশোধন করতেও বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, হুয়াউই এবং জেডটিই এই দুই চিনা সংস্থা পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং জম্মু-কাশ্মীরে বিএসএনএল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী।
বিএসএনএলের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘এটা দেশের সুরক্ষা-নিরাপত্তার বিষয়। সরকার যদি কোনও চিনা সংস্থার যন্ত্রাংশ না কিনতে নির্দেশ দেয় তবে বিএসএনএল প্রথম সেই নির্দেশ পালন করবে।’ সারা দেশে তাদের ৫০,০০০ টু-জি এবং থ্রি-জি নেটওয়ার্ক ফোর-জিতে উন্নীত করার জন্য বিএসএনএল একটি গ্লোবল টেন্ডার ডাকে এবং আগামী ২৪ জুন দরপত্র দেওয়ার শেষ তারিখ।
টেলিকমের পর রেলেও চিনা সংস্থার অংশগ্রহণ বাতিলের পথে হাঁটছে সরকার। বৃহস্পতিবার ভারতীয় রেল আধিকারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় রেলের শাখা সংস্থা ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডর (কেবল পণ্য পরিবহণের জন্য রেলপথ) কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াও চিনের বেইজিং ন্যাশনাল রেলওয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন ইনস্টিটিউট অফ সিগন্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশন গ্রুপকে দেওয়া বরাত বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘কাজের অগ্রগতি ঢিলেমি’র কারণ দেখিয়ে ওই বরাত বাতিল করা হতে পারে।
ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডরে কানপুর থেকে মুঘলসরাই পর্যন্ত ৪১৭ কিলোমিটার রেলপথের সিগন্যালিং এবং টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার জন্য চিনের সংস্থাটিকে ৪৭১ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। গত বছর ওই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু, কাজের মাত্র ২০ শতাংশই সম্পূর্ণ হয়েছে বলে রেল সূত্রেবলা হয়েছে।
এরই পাশাপাশি, দিল্লি-মীরঠ র্যাপিড রেল ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের জন্য সাংহাই টানেল ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাকে যে বরাত দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল (ওই চিনা সংস্থা সবচেয়ে কম দরপত্র দেয়), তাও এখন বাতিল করা হতে পারে। চিনা সংস্থাটি এখনও পর্যন্ত ওই বরাতের ‘লেটার অফ অ্যাওয়ার্ড’ — লিখিতভাবে বরাত পাওয়ার নথি — পায়নি। কেন্দ্রীয় আবাসন মন্ত্রক এই প্রকল্পের দায়িত্বে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের অর্থ সাহায্যে প্রকল্পটি তৈরি হবে। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, ‘জমা পড়া দরপত্রগুলির মূল্যায়ন চলছে।’
গত সোমবার লাদাখ সীমান্তে সেনা সংঘর্ষ এবং ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর ভারতের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পে বরাত পাওয়া চিনা সংস্থাগুলির পক্ষে ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতেই টনক নড়েছে চিনের।
বৃহস্পতিবার চিনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায়, যেটিকে চিন সরকারের মুখপত্র মনে করা হয়, এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, লাদাখ সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ভারতে যে চিন বয়কটের ডাক উত্তরোত্তর সোচ্চার হচ্ছে তা সরকারের (ভারত) কমানো উচিত। বলা হয়েছে, ‘চিনের অতি-বিরোধী কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ভারতে চিনা পণ্য বয়কটের ধোঁয়া তুলছে এবং এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আহ্বানে গলা মিলিয়েছেন প্রচুর অনুরাগী থাকা কিছু সেলিব্রিটি। এঁরা নিজেদের স্বার্থে প্রচণ্ড উৎসাহে চিন-বিরোধী প্রচারে নেমেছেন। যখনই দুই দেশের (চিন ও ভারত) মধ্যে কোনও মতানৈক্য সৃষ্টি হয়, তখনই এঁরা চিনা পণ্য বয়কটের প্রচারে নেমে পড়েন। এবং, এই বিরোধীতা দ্বিপাক্ষিক (দুই দেশের) সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তোলে।’
সম্পাদকীয়টিতে আরও বলা হয়, ‘ভারতের যুক্তিবাদীরা বারবার বলে আসছেন এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশের (চিন) সঙ্গে তৃতীয় বৃহৎ দেশের (ভারত) কোনওরকম সংঘাতে যাওয়া বাস্তব-বিবেচনাহীন এবং ধ্বংসাত্মক। সীমান্ত সমস্যার সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে জড়ানো অযৌক্তিক।’