জলবায়ু উদ্বাস্তু – এক ভয়ংকর প্রলয়ের পূর্বাভাষ
বিশ্বজুড়ে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বন ধ্বংসের মতো কাজের ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বায়ুমণ্ডলকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত করছে। এর ফলে হিমবাহ ও পাহাড় চূড়ার বরফ দ্রুত গলছে। এই বাড়তি উত্তাপ বিশ্বের কোন কোন অঞ্চলে অনাবৃষ্টি জনিত শুষ্কতার সৃষ্টি করছে; তেমনি মরুকরণ প্রবণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে।
এই সব কারণ ঐ সকল এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। ক্ষেত্রবিশেষে ঐ সব এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এবং জনসাধারণ ঐ সকল এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু।
জলবায়ু উদ্বাস্তুর ধরন:
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে তিন ধরনের জলবায়ু উদ্বাস্তু দেখা যেতে পারে:
- জরুরি পরিবেশগত কারণে অভিবাসী: আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এরা অস্থায়ীভাবে অভিবাসন করে থাকে। যেমন: হ্যারিকেন, সুনামি, ভূমিকম্প প্রভৃতি।
- পরিবেশগত কারণে বাধ্য হওয়া অভিবাসী: পরিবেশের উপাদানগুলির মান ক্রমশ নিম্নগামী হওয়ার কারণে এরা অভিবাসী হয়ে থাকে। যেমন: বন ধ্বংস, উপকূলীয় জনপদের অবনমন প্রভৃতি।
- পরিবেশগত কারণে উদ্বুদ্ধ হওয়া অভিবাসী: সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে এরা অভিবাসী হয়ে থাকে। যেমন: মরুকরণের কারণে ফসলের উৎপাদনশীলতা কমে গেলে।
জলবায়ু উদ্বাস্তু সংক্রান্ত কিছু তথ্য:
- সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বে ইতোমধ্যে ১ কোটি উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হয়েছে।
- রাজনৈতিক উদ্বাস্তুর চেয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ছয় গুণ বেশি হতে পারে।
- আগামী দিনগুলিতে বিশ্বে ৫ কোটি জলবায়ু উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হতে পারে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ২০ কোটিতে দাঁড়াতে পারে।
- ২০০৯ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বে ৩.৬ কোটি মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছিল।
- ২০১০ থেকে ২০১১ সালে শুধুমাত্র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই বিরূপ পরিবেশের কারণে ৪.২ কোটি মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে।
জলবায়ু উদ্বাস্তু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়:
জলবায়ু উদ্বাস্তু সৃষ্টির প্রধান কারণ যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তন, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা কমানোর জন্য রাষ্ট্রসমূহকে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে কিয়োটো প্রটোকলের মতো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার অন্যতম প্রধান উপায় পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। এক্ষেত্রে যথাযথ কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিগত দিক থেকে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।