স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

কোন রোগ সারাতে উপকারী কোন রাগ? 

June 21, 2020 | 2 min read

পছন্দের সুরে মন ভাল হয়। গানের ধরণ অনুযায়ী কখনও শান্ত হয় তো কখনও চনমনে হয়। কিন্তু সে যে আবার অসুখবিসুখও সারাতে পারে, সে কথাও মানেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, তেমন ভাবে শোনাতে পারলে হতাশার রোগী ভুলে যেতে পারেন তাঁর কষ্টের কথা, ব্যথা–বেদনায় ভারাক্রান্ত মানুষ সাময়িক ভাবে হলেও চাঙ্গা  হয়ে উঠতে পারেন৷ অনিদ্রার রোগীর চোখে নেমে আসতে পারে শান্তির ঘুম৷ স্ট্রেস–টেনশনে জেরবার মানুষ খুঁজে পেতে পারেন তাঁর সমস্যার হাল!

কারণ, পছন্দের গান বা সুর সোজা গিয়ে হানা দেয় মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামের অংশে৷ যা কিনা সব আবেগের কেন্দ্র৷ পছন্দের গানে তারা উদ্দীপীত হয়৷ এনআইবিপি নামের মনিটর লাগালে ধরা পড়ে সেই উদ্দীপনা৷

প্রবল ব্যথায় বা টেনশনে যে হৃদস্পন্দন, নাড়ির গতি ও রক্তচাপ বেড়ে থাকে, তারা সব কমতে শুরু করে৷ একআধ বারেই কষ্ট একেবারে কমে যায় এমন নয়, তবে সুরের জগৎকে আপন করে নিতে পারলে ওষুধের মাত্রা কমে যায়৷ এরই নাম মিউজিক থেরাপি৷

বেদনানাশে ভূমিকা

মারাত্মক মানসিক চাপ ও টেনশন চলতে থাকলে সুরে ডুবে যাওয়া একটু কঠিন৷ কিন্তু কোনোমতে ডুবে যেতে পারলেই হল৷ আঠার মতো লেগে থাকা স্ট্রেস হরমোনকে সরিয়ে মন ভাল করা হরমোনরা ক্ষরিত হয়৷ তাতে সাময়িক ভাল লাগা যেমন হয়, কমে উচ্চ রক্তচাপ–নিদ্রা ও দীর্ঘমেয়াদী অসুখের প্রকোপ৷ মেজর ডিপ্রেশনে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে আশাতীত ফল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷

বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, হসপিটাল সিকনেসের প্রকোপ কমাতে মিউজিক থেরাপি একাই একশো৷ সেরিব্রাল পাল‌্‌সি, অটিজম ও পক্ষাঘাতের শুরুতে অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিউজিক থেরাপি করলে ভাল ফল হয়৷ লাভ হয় বাতের চিকিৎসাতেও৷ এমনকী, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কষ্টকর অসুখেও তার ভূমিকা আছে৷ নিয়মিত থেরাপি নিলে এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো বাড়িতে তার প্রয়োগ করলে ক্রনিক ব্যথার রোগীদের কাছে খুলে যায় এক নতুন দিগন্ত৷

কিভাবে হয়?

অসুখের জটিলতার উপর নির্ভর করে অন্য চিকিৎসার পাশাপাশি এই থেরাপি করা হয়৷ প্রথমে রোগীর সঙ্গে কথা বলেন সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও মনোবিদ৷ মনে লুকিয়ে থাকা দুঃখ–কষ্টরা সব বেরিয়ে আসার পথ পায়৷ কিছুটা আরাম পান রোগী৷ প্রস্তুত হয় থেরাপির ক্ষেত্র৷ 

এ বার আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর পাশাপাশি তাঁর পছন্দের গান ও সুরের তালিকা বানানো হয়৷ মিউজিক থেরাপিস্ট নিয়ন্ত্রিত ভাবে সেই সব শোনাতে থাকেন এবং তাতে তাঁর কষ্ট কতটা কমছে তা বিভিন্ন পদ্ধতিতে মেপে দেখেন৷ 

কিছু দিন থেরাপি নেওয়ার পর অনেক সময়ই ওষুধের মাত্রা  কমে যায়৷ কারণ টেনশন কমে গেলে মানুষ সঠিক জীবনযাপনে উদ্যোগী হন৷ তার হাত ধরে কমে যায় রোগের প্রকোপ৷

বাড়িতেও সম্ভব

সব সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে বা বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেরাপি করতে হবে এমন নয়৷ অল্পস্বল্প সমস্যায় নিজেও করতে পারেন৷ বা ছোট থেকে যদি নিয়ম করে গান শোনার অভ্যাস করতে পারেন, বিপদের সময় সে আপনার আশ্রয় হয়ে উঠতে পারবে৷ 

কোন অসুখে কোন রাগ?

থেরাপির ক্ষেত্রে কী গান বা সুর শুনবেন তা নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিত্ব ও কী সমস্যায় ভুগছেন তার উপর৷ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে আহির ভৈরব এবং টোড়ি, নিম্ন রক্তচাপে মালকোষ, মাথাব্যথায় দরবারি কানাড়া ও জয়জয়ন্তী, ঘুম পাড়াতে বাগেশ্রী ও দরবারি কানাড়া, টেনশন কমাতে দরবারি কানাড়া–খাম্বাজ এবং পুরিয়া খুব কার্যকর৷ উচ্চাঙ্গ সংগীতে আগ্রহ থাকলে এ সব শুনতে পারেন৷ 

তা সম্ভব না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো লিস্ট করে নিন৷

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#world music day, #Music Therapy

আরো দেখুন