থ্যালাসেমিয়া শিশুদের আয়ু বাড়াতে ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘ফেনোটাইপ ম্যাচিং! প্রকল্প মমতার
রাজ্যে সরকারি ক্ষেত্রে নথিভুক্ত থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। বেসরকারি ক্ষেত্র ধরলে সংখ্যাটি প্রায় ২০ হাজার। লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হতে থাকা, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে লোহা জমা সহ একাধিক সমস্যার জন্য কমবেশি এদের গড় আয়ু ২৪-২৫ বছরের বেশি হয় না। মাসে একবার রক্ত দিতেই হয় এদের একটি বড় অংশকে। এদের রক্তের চাহিদা যাতে কমে, দু’বার রক্ত নেওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সময় যাতে বাড়ে ও একইভাবে বাড়ে গড় আয়ু, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য দপ্তর তার জন্য আনতে চলেছে নয়া প্রকল্প। স্টেট ব্লাড সেল ও রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে শীঘ্রই চার সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এইসব বাচ্চাদের রক্ত দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এই পদ্ধতির নাম ‘ফেনোটাইপ ম্যাচিং’।
চিকিৎসকরা জানান, মানবদেহে এ, বি, ও ছাড়াও ৩৫০ ধরনের রক্তের গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের পজিটিভ, নেগেটিভ স্থির হয় ‘আরএইচ’-এর মাধ্যমে। এই ‘আরএইচ’-এর মধ্যে চারটি অ্যান্টিজেন আছে। বড় হাতের সি, ছোট হাতের সি, বড় হাতের ই এবং ছোট হাতের ই। থ্যালাসেমিয়া শিশুদের এই অ্যান্টিজেন ম্যাচ করিয়ে (‘ফেনোটাইপ ম্যাচিং’) রক্ত দিয়েই দীর্ঘজীবন দেওয়ার লক্ষ্যে নামবেন চিকিৎসকরা। এতে প্রতিবার রক্ত নেওয়ায় ২৫০ মাইক্রো গ্রাম করে লোহা জমার আশঙ্কা কমবে। ধারাবাহিকভাবে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা আটের একটু বেশি রাখার চেষ্টা হবে।
প্রকল্পে জড়িত মেডিক্যাল কলেজের রক্ত সংবহন বিভাগের শিক্ষক চিকিৎসক এবং রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের কর্তারা বলেন, এই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে রক্ত দেওয়ায় বিদেশে বহু শিশু আর পাঁচজন স্বাভাবিক মানুষের মতো স্বাভাবিক আয়ু ভোগ করে। মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্ক, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্ক, এন আর এস ব্লাড ব্যাঙ্ক ও বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাঙ্কে এই প্রকল্প শুরু হচ্ছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য ব্লাড ব্যাঙ্কেও তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
সূত্রের খবর, এই প্রকল্প চালুর পিছনে সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল থ্যালাসেমিয়া খাতে রক্তের চাহিদা কমানো। রাজ্যজুড়ে বছরে মোট সংগৃহীত রক্তের ৪২ শতাংশ বা প্রায় তিন লক্ষ ইউনিটই ব্যয় হয় থ্যালাসেমিয়ার জন্য। নতুন প্রকল্পে রক্তের চাহিদা ও জোগানেও ভারসাম্য আসবে।