চার লাখ টেস্টের গণ্ডি পার বাংলার
দৈনিক ১০ হাজারের বেশি কোভিড টেস্ট হতে শুরু করেছিল তিন দিন আগে থেকেই। রবিবারও ১০,৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে রাজ্যে। আর সেই সূত্রেই করোনা পরীক্ষার মোট সংখ্যায় চার লক্ষ টেস্টের গণ্ডি টপকালো বাংলা। এ দিন সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া বুলেটিন বলছে, এ যাবৎ মোট ৪,০১,৪৯১টি টেস্ট হয়েছে। স্বাস্থ্য মহলের মতে, টেস্টের সংখ্যা চার লাখের মাইলফলক পেরিয়ে যাওয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা, এর ফলে প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪৬১। সারা দেশের মধ্যে মোট টেস্ট সংখ্যার বিচারে একসময়ে পিছনের সারিতে থাকলেও দ্রুত উন্নতি করে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান এখন ষষ্ঠ। বাংলার চেয়ে বেশি টেস্ট হয়েছে একমাত্র কর্নাটক (৪.৯৩ লক্ষ), অন্ধ্রপ্রদেশ (৬.৭০ লক্ষ), রাজস্থান (৬.৭৫ লক্ষ), মহারাষ্ট্র (৭.৭০ লক্ষ) ও তামিলনাড়ু (৮.৮০ লক্ষ)। একই সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১৪ জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলেছে। ফলে রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩,৯৪৫।
অথচ কিছু দিন আগেও কোভিড টেস্টের সংখ্যা নিয়ে বাংলাকে সমালোচনা শুনতে হয়েছে কেন্দ্রীয় দলের কাছ থেকে। কেননা, মে মাসের গোড়ার দিকেও রাজ্যের মাত্র ১৬টি ল্যাব মিলিয়ে দিনে আড়াই হাজারের বেশি টেস্ট হত না রাজ্যে। প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় ৩০০ জনেরও করোনা পরীক্ষা হত না তখন। মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই অবশ্য গতি বাড়ায় রাজ্য। ঠিক এক মাস আগে একদিনে ৪২৪২টি নমুনা পরীক্ষার সূত্রে ‘পার-মিলিয়ন’ টেস্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৮০। রাজ্যের কোভিড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনটেনমেন্ট কমিটির স্টেট কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘১ মে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই লক্ষ্য ছিল, মাস শেষের আগে যেন দেড় লক্ষ টেস্ট করে উঠতে পারি আমরা। সেইমতো টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানোয় নজর দেওয়া হয়। ফল মেলে হাতেনাতে। ৩১ মে দেখা যায়, দু’ লক্ষের সামান্য বেশি টেস্ট করে উঠতে পারা গিয়েছে। ফলে পার-মিলিয়ন টেস্টের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৩০০।’
স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক বলেন, গত তিন সপ্তাহে ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯টি। প্রতিটি ল্যাবের দৈনিক পরীক্ষার পরিকাঠামোতেও উন্নতি হয়েছে। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত রাজ্যে যত করোনা পরীক্ষা হয়েছিল, প্রায় সেই একই সংখ্যায় টেস্ট সম্ভব হয়েছে গত তিন সপ্তাহে মাত্র। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, এর ফলে রোজ আরও বেশি সংখ্যায় করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপনকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘এর ইতিবাচক দিকটি হল, যত মানুষের শরীরে সংক্রমণটা ধরা পড়বে, তত বেশি মানুষকে নজরদারির আওতায় আনা যাবে। এর ফলে রোগটার ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো যাবে। সেই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আগাগোড়া বেশি টেস্টের পক্ষে সওয়াল করে আসছে।’
হু-র পরামর্শ অবশ্য প্রথম থেকেই কেরালা, তামিলনাড়ু, দিল্লি, গুজরাট, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্য অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু এ রাজ্যে প্রথম দিকে নাইসেড, এসএসকেএম এবং উত্তরবঙ্গ ও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া কোথাও আরটি-পিসিআর টেস্টের পরিকাঠামো না-থাকায় বাংলা পিছিয়ে পড়েছিল টেস্টের সংখ্যায়। পরে যদিও খুব অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে গতি বাড়ায় রাজ্য। পার-মিলিয়ন টেস্টে দিল্লি (১৮,৫২১) ও গুজরাট (৪৯২৮) ছাড়াও গোয়া, ত্রিপুরা, অরুণাচলপ্রদেশ, মণিপুর, হিমাচলপ্রদেশ, মিজোরামের মতো ছোট ছোট অনেক রাজ্য বাংলার চেয়ে এগিয়ে। যদিও মোট পরীক্ষার সংখ্যা সেখানে এখনও চার লক্ষের মাইলফলক ছোঁয়নি। অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রে তা বড়জোর ৫০-৬০ হাজার। কিন্তু জনঘনত্ব কম বলে পার-মিলিয়ন টেস্টের নিরিখে তাদের অবস্থান বাংলার চেয়ে ভালো।