উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

একশোদিনের কাজে রেকর্ড ফালাকাটার

June 22, 2020 | 2 min read

করোনা পরিস্থিতিতে একশোদিনের কাজে রেকর্ড সংখ্যক শ্রমদিবস তৈরি করল ফালাকাটা ব্লক। চলতি অর্থবর্ষের চার মাসের মধ্যে প্রায় দশ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে এই ব্লকে। যা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সর্বোচ্চ। রাজ্যের মধ্যে ফালাকাটার অবস্থান তৃতীয়। তবে সামগ্রিকভাবে আলিপুরদুয়ার জেলার অবস্থানও ভালো। সর্বোচ্চ শ্রমদিবস তৈরির ক্ষেত্রে প্রথম দশের তালিকায় ফালাকাটা সহ জেলার পাঁচটি ব্লক রয়েছে।

সূত্রের খবর,শুধু কাগজে কলমে শ্রমদিবস তৈরিই নয়,ফালাকাটার হাজার হাজার জবকার্ডধারী শ্রমিকরা কাজ করার পাশাপাশি মজুরিও পেয়েছেন। ব্লক প্রশাসনের দাবি, কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকেও কাজ দেওয়া হয়েছে। একশোদিনের প্রকল্পের আলিপুরদুয়ার জেলার নোডাল অফিসার রাতুল ঘোষ বলেন, ‘জেলা শাসকের তত্ত্বাবধানে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়েছে। বিডিও,গ্রাম পঞ্চায়েতের টিম অক্লান্ত পরিশ্রম করাতেই এই সাফল্য এসেছে।’

গত মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির জেরে লকডাউনের প্রথম দফায় কাজ হারিয়ে ফেলেন প্রচুর মানুষ। পরবর্তীতে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একশোদিনের কাজকে বেশি গুরুত্ব দেয়। সরকারি শর্ত মেনে জোরকদমে শুরু হয় একশোদিনের কাজ। রাজ্যের কোন ব্লক কত পরিমাণ মানুষকে কাজ দিতে পারে তা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। রাজ্যের প্রান্তিক জেলা আলিপুরদুয়ারেও কমিউনিটি স্কিম ও ইন্ডিভিজুয়াল স্কিমে একাধিক প্রকল্পের কাজ চলছে। এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত ফালাকাটায় সব থেকে বেশি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে।

একশোদিনের কাজে রেকর্ড ফালাকাটার

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ফালাকাটা ব্লকে এখনও অবধি ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ২৮৫ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। যা কোভিড পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলার বাকিসব ব্লকগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। ফালাকাটায় এই শ্রমদিবসে ৩৮ হাজার ৪১২টি পরিবার কাজ পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ৪৭ হাজার ৭৩১ জন শ্রমিক একশোদিনের কাজ করেছেন। ১৪ দিন পর্যন্ত কাজ পেয়েছে ৬ হাজার ৯৫টি পরিবার, ১৫-৩০ পর্যন্ত ২২ হাজার ২০৩টি পরিবার, ৩১-৪০ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৭৮টি পরিবার,৪১-৫০ দিন পর্যন্ত ২ হাজার ৪৪৮টি পরিবার, ৫১-৬০ দিন পর্যন্ত ১৬৮২টি পরিবার, ৬১-৭০ দিন পর্যন্ত ৬৪৪টি পরিবার, ৭১-৮০ দিন পর্যন্ত ৩৩০টি পরিবার, ৮১-৯৯ দিন পর্যন্ত ২১৮টি পরিবার ও পুরোপুরিভাবে ১০০ দিন কাজ পেয়েছে ১৪টি পরিবার।

এই কয়েক মাসে কমিউনিটি স্কিমের মধ্যে মাটির বাঁধ তৈরি, ভূমি সংস্কার, পুকুর খনন, বৃক্ষরোপন, ভার্মি কম্পোসের কাজ বেশি হয়েছে। মৎস দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে গোটা ব্লকে প্রায় ৮০০ পুকুর খনন হয়েছে। এছাড়াও বাংলা আবাস যোজনায় উপভোক্তারা কয়েক ধাপে একশোদিনের প্রকল্পে ইন্ডিভিজুয়াল কাজও পেয়েছেন। সূত্রের খবর, প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী ফালাকাটা ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১০ হাজার ২৭৩ জন। এরমধ্যে ইতিমধ্যে ছয় হাজারেরও বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন। প্রশাসনের দাবি, অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার একশোদিনের কাজ পেয়েছে। বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁদের জবকার্ড ছিল,তাঁরা প্রথম দিক থেকেই কাজ পেয়েছেন। যাঁদের কার্ড ছিল না তাঁদের জবকার্ড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’

জানা গিয়েছে,কোভিড পরিস্থিতিতে একশোদিনের প্রকল্পে রাজ্যের মধ্যে আলিপুরদুয়ার জেলার অবস্থান অনেকটাই ভালো। রাজ্যের মধ্যে ১৪ লক্ষ ৩১ হাজার ২৭৮ শ্রমদিবস তৈরি করে প্রথম স্থানে রয়েছে পশ্চিম মেদিনিপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ ব্লক। আবার চন্দ্রকোনা-২ ব্লক ১১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৮৬ শ্রমদিবস তৈরি করে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে নাম রয়েছে ফালাকাটা ব্লকের। যা উত্তরবঙ্গের মধ্যে সর্বোচ্চ। তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে ফালাকাটার পাশাপাশি চতুর্থ স্থানে আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম,পঞ্চম স্থানে মাদারিহাট,ষষ্ট স্থানে কালচিনি ও নবম স্থানে আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের নাম রয়েছে। ফালাকাটার অবস্থান নিয়ে বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন,’কঠিন পরিস্থিতিতে ব্লকের মানুষকে চাহিদা অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়েছে। এটা সম্মিলিত চেষ্টার ফল। চলতি অর্থবর্ষের বাকি মাসগুলিতেও এই রেকর্ড ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#100 days works, #Falakata, #West Bengal, #Coronavirus, #alipurduar

আরো দেখুন