সেনাকে দেওয়া হল অস্ত্র কেনার ক্ষমতা, সীমান্তে কঠোর নজরদারি
গলওয়ানে বিশেষ অভিযানের জন্য পুরোপুরি তৈরি ভারতীয় সেনা। রবিবার রাত পর্যন্ত সেনা সূত্রের যা খবর, তাতে পূর্ব লাদাখে ভারতের প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় সমরসজ্জা এবং নয়াদিল্লির তৎপরতা গলওয়ানে বিশেষ অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ।
তবে এই অভিযান হতে পারে নিয়ন্ত্রিত, যাকে বলা হচ্ছে ‘লিমিটেড এরিয়া অপারেশন’। কেননা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছেন যে, ভারতের ভূখণ্ডে কেউই ঢুকতে পারেনি। এখানে কেউ কোনও সেনাছাউনি দখল করতে পারেনি। এর পরে গলওয়ানে বড় মাপের অভিযান চালানো সেনাবাহিনীর পক্ষে এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে। আবার এলাকার বাস্তব বলছে, দ্রুত অভিযান না-চালালেই নয়।
গলওয়ান, প্যাংগং হ্রদ, গোগরা উষ্ণ প্রস্রবণের মতো এলাকায় চিনা ফৌজের সক্রিয়তা বেড়েছে। আশঙ্কা, এ রকম চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় ভূখণ্ডের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন হাতছাড়া হতে পারে সেনাবাহিনীর। অতএব, নিয়ন্ত্রিত অভিযানের দিকেই ভারত যেতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
গলওয়ানে রবিবার রাত পর্যন্ত সেনা তৎপরতার যা গতিপ্রকৃতি, তাতেও অনেকে অভিযানের ইঙ্গিত দেখছেন। মূলত চারটি বড় পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রথমত, জলে-স্থলে-আকাশপথে কঠোরতম নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন বাহিনীকে। দ্বিতীয়ত, কোনওরকম গোলমালের সম্ভাবনা দেখলেই যাতে জওয়ানরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারেন, সে জন্য বলপ্রয়োগের পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বাহিনীকে। অর্থাৎ, এ বার আর নয়াদিল্লি থেকে অনুমতি আসার অপেক্ষা করতে হবে না। তৃতীয় তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হল যুদ্ধাস্ত্র কেনার জন্য সেনাবাহিনীর হাতে অর্থক্ষমতা দেওয়া। চতুর্থত এবং এই মুহূর্তে সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অভিযানের জন্য তৈরি করে ফেলা হয়েছে বিশেষ ঘাতক প্ল্যাটুনকে।
রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগে, রবিবার চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানেই জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিন যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তাতে ‘রুলস অফ এনগেজমেন্ট’ বদলাতে বাধ্য হচ্ছে ভারতের মতো শান্তিপূর্ণ দেশ। ভারত-চিন মুখোমুখি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি শনিবারই দেওয়া হয়েছিল। তেমন বেগতিক বুঝলে জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা যে বাহিনীর রয়েছে, রবিবার তা-ও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। ভারত ও চিনের সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্তজুড়েই এই নজরদারি চলবে। সীমান্তে লাল ফৌজের গতিবিধি নখদর্পণে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাহিনীকে। রাওয়াত ছাড়াও সেনাপ্রধান এমএম নারাভানে, নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিং এবং বায়ুসেনা প্রধান মার্শাল আরকেএস ভাদোরিয়াকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, তিন দিনের রাশিয়া সফরে চিনের এই আগ্রাসনের প্রসঙ্গ তুলে ধরবেন তিনি।
চিনের মোকাবিলায় যাতে বাহিনীর হাতে অস্ত্রের অভাব না-হয়, তা নিশ্চিত করতে দেওয়া হয়েছে অর্থক্ষমতাও। এ বার থেকে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে তিন বাহিনী আলাদা করে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারবে। তার আগে অবশ্য কারণ জানাতে হবে প্রতিরক্ষামন্ত্রককে। এত দিন বাহিনী তাদের চাহিদার কথা প্রতিরক্ষামন্ত্রকে জানাত। মন্ত্রক সেই সব অস্ত্র কিনে দিত বাহিনীকে। কিন্তু এ বার আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বাহিনী নিজের অস্ত্র নিজেই কিনে নিতে পারবে। এই ক্ষমতা পাওয়ার পরে তিন বাহিনীই তাদের প্রয়োজনমতো অস্ত্র ও সরঞ্জামের তালিকা তৈরি করে ফেলছে যাতে দ্রুত সে সব কেনা যায়।
একদিকে যখন এ সব পরিকল্পনা চলছে, তখন সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে ৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘাতক কম্যান্ডোদের৷