টিকা বেরোলেই সংক্রমণ শেষ হয়ে যাবে না
কোভিড-১৯ ভাইরাসের হানাদারি রুখতে প্রথম যে টিকাগুলি বাজারে আসবে, সেগুলি সংক্রমণ পুরোপুরি নাও রুখতে পারে। সেই টিকাগুলির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে। আর সেটা অস্বাভাবিকও নয়। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফলে, টিকা দেওয়ার পরের দিন থেকেই যদি কেউ ভাবতে শুরু করেন, কোভিডের হানাদারির আর কোনও আশঙ্কা নেই তাঁর, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেটাই সবচেয়ে বড় ভুল হবে। কারণ, ওই সময় উপসর্গ না থাকলেও পরে তিনি ফের আক্রান্ত হতে পারেন কোভিডে।
দ্রুত করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত কয়েক মাস থমকে থেকেছে গোটা বিশ্ব, লকডাউনের জেরে। তার ফলে, বিশ্বের অর্থনীতির হাল করুণ হয়ে উঠেছে। পরে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠিয়ে নিয়ে ছন্দে ফেরার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তাতে মানুষের মেলামেশা বাড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে সংক্রমণের আশঙ্কাও। তাই যে ভাবেই হোক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোভিডের টিকা বাজারে আনার চেষ্টা শুরু হয়েছে জোরকদমে। বিশ্বজুড়েই যাতে সংক্রমণ রোখা যায়।
আপাতত যেটুকু খবর, কোভিডের প্রথম টিকাগুলি বাজারে আনতে চলেছে সম্ভবত তিনটি সংস্থা ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেসা এবং চীনা সংস্থা ক্যানসিনো বায়োলজিক্স। কিন্তু কোনও টিকাকে কোনও সংক্রমণ রুখতেই হবে, সেটাই তার এক ও একমাত্র কাজ, তা একেবারেই সঠিক নয় বলে মনে করেন ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপ্স রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইমিউনোলজিস্ট ডেনিস বার্টন।
আবার ‘টিকা নিলাম আর বরাবরের মতো সেরে উঠলাম’ এমন ভাবনা সদ্য লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করা দেশগুলির নাগরিকদের পক্ষে পরে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, জানাচ্ছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট ভাইস চ্যান্সেলর মিশেল কিঞ্চ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, প্রতি বছর বিশ্বে সর্বাধিক ৩০ লক্ষ মানুষকে কোনও সংক্রমণে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায় বিভিন্ন টিকা। তবে সেগুলি সব মানুষের ক্ষেত্রে যে ১০০ শতাংশই সফল হবে, তা কিন্তু নয়। যেমন, হামের টিকা। যাদের এই টিকা দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে ৩ শতাংশের পরেও হাম হয়। যদিও তা ততটা ভয়ঙ্কর হয় না। কিন্তু তাদের থেকেও হামের সংক্রমণ ছড়ায়।
তাই আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ’-এর অধিকর্তা অ্যান্টনি ফওসি বলেছেন, “যেন কেউ মনে না করেন, টিকা বাজারে আসার পরেই তাকে নকআউটে জিতিয়ে দেবে কোভিড-১৯ ভাইরাস। সংক্রমণ তার পরেও ঘটতে পারে। কারণ, কোনও টিকায় সংক্রমণ একেবারেই ছড়াবে না, এটা ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। কোনও দিনই তা সম্ভব হয়নি।’