কেন্দ্রের হকার প্রকল্পেও ফের বঞ্চিত বাংলা
ভিন রাজ্য থেকে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের পর কেন্দ্রের হকার প্রকল্পেও ফের বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ।
লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হকাররা যাতে নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সে জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী স্ট্রিট ভেন্ডর আত্মনির্ভর নিধি’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। তাতে নথিভুক্ত হকারদের সামান্য সুদে ১০ হাজার টাকা করে ব্যাঙ্ক ঋণ দেওয়ার কথা। অন্য কয়েকটি রাজ্যে এই প্রকল্পে হকারদের ঋণদান প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। কিন্তু নিয়মের গেরোয় এ রাজ্যের হকাররা ব্যাঙ্কে আবেদনের সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না। ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে কেন্দ্রের শর্ত, সংশ্লিষ্ট হকারদের সরকারি পরিচয়পত্র থাকতে হবে বা সরকারি তালিকায় নথিভুক্ত থাকতে হবে। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও হকারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই। বৈধ পরিচয়পত্রও নেই। তাই এখানকার হকাররা ঋণের জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করতে পারছেন না। বাংলার হকাররা যাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বঞ্চিত না হন, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে ন্যাশনাল হকার ফেডারেশন। বিকল্প হিসেবে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে হকারদের ঋণ দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছে তারা।
পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণের আগে হকার চিহ্নিতকরণ এবং তথ্য সংগ্রহে পুরসচিব খলিল আহমেদকে নির্দেশ দিয়ছেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সেই মতো হকারদের স্কিমও তৈরি করতে বলেছেন। পুরমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, কলকাতা-সহ রাজ্যের ১৩১টি পুরসভার প্রায় ২০ লক্ষ হকারের তথ্যপ্রমাণ জোগাড়ে সময় লাগবে। সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত হকারদের ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী এবং শ্রমিক নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘লকডাউনে লক্ষ লক্ষ হকার বেকার হয়েছেন। হকারদের ঋণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে সব শর্ত দিয়েছে তার ফলে যদি তাঁরা সুবিধাটাই না পান, তা হলে আসল কাজটাই হবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম শিথিল করা উচিত।’
ন্যাশনাল হকার ফেডারেশনের সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘লক্ষ লক্ষ হকারের রোজগার বন্ধ। সংসার চালাতে অনেকেই ব্যবসার পুঁজি ভেঙেছেন। কয়েক দিন আগে গড়িয়াহাটের এক হকার অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছেন। হকারদের বাঁচাতে গেলে এখন নগদ সাহায্য দরকার। ১ জুলাই থেকে সারা দেশের হকাররা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ব্যাঙ্ক ঋণ পেতে শুরু করবেন। বাংলার হকাররা যাতে বঞ্চিত না হন, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি।’ সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় আইন অনুসারে প্রত্যেক রাজ্যে হকার রুলস এবং টাউন ভেন্ডিং কমিটি গঠনের কথা। আইনেই বৈধ হকারদের লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ রাজ্যে সেই কাজটা এতদিনে কেন হল না, সেটাই প্রশ্ন। রাজ্য এবং কেন্দ্র, কেউই দায় এড়াতে পারে না।’ বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, ‘দলীয় স্তরে দিল্লি থেকে আমাদের কাছে রাজ্যের হকার সংখ্যা ও নানা তথ্য জানাতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালিকাই তো নেই। সব পুরসভার উচিত অত্যন্ত দ্রুত তালিকা তৈরি করা, যাতে রাজ্যের হকাররা বঞ্চিত না হন।’ তবে পুর দপ্তর সূত্রের ইঙ্গিত, হকার কল্যাণে পৃথক প্রকল্প আনতে চলেছে রাজ্য।