স্বাস্থ্য বিভাগে ফিরে যান

বাড়ছে সংক্রমণ, শুধু জুনেই মাস্ক না পরায় মামলা শহরে

June 23, 2020 | 2 min read

রবিবার সকালে বেলেঘাটা বাজারে বেরিয়েছেন এক প্রৌঢ়। মুখে মাস্কের বালাই নেই। রাস্তায় টহলদার পুলিশ প্রৌঢ়কে দেখে জানতে চাইলেন, মাস্ক পরে বেরোননি কেন? আমতা আমতা করে প্রৌঢ়ের জবাব, ‘সারাক্ষণই তো মাস্ক পরে থাকছি। গরমে ঘেমে যাচ্ছিলাম বলে পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছি।’ পুলিশের ধমক খেয়ে ফের মাস্ক লাগালেন মুখে!

সোমবার দুই মাঝবয়সি যুবক বড়বাজারে বাইকে যাচ্ছিলেন ব্যবসার কাজে। হেলমেটের নীচ থেকেই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মাস্কে নাক-মুখ ঢাকা নেই। বরং তা আলতো করে টেনে থুতনির কাছে নামানো। বাইক আরোহীদের অজুহাত, একটানা মাস্ক লাগালে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাড়ির বাইরে বেরলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, বলছেন চিকিৎসকরা। পুলিশ-প্রশাসনও বারবার মাস্ক পরা এবং যত্রতত্র থুতু ফেলা রুখতে প্রচার চালাচ্ছে। অথচ সাধারণ নাগরিকদের একাংশ তাতেও নির্বিকার। অনেকেই মাস্ক পরছেন না, অনেকে আবার বিভিন্ন অজুহাতে মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে বা পকেটে ভরে রাখছেন। আনলক ওয়ান পর্বে কলকাতায় যেখানে করোনা সংক্রমণ এবং কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী, সেখানে বিধি মানতে এক শ্রেণির নাগরিকের প্রবল অনীহা সবার বিপদ বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকরা। এই তালিকায় শুধু যেমন মুদি দোকানি, রিকশা বা গাড়িচালক রয়েছেন, তেমনই আছেন কলেজ পড়ুয়া বা সরকারি-বেসরকারি সংস্থার চাকুরেও। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, রাস্তায় যাওয়ার সময় তিনি নিজেই দেখেছেন, অনেকে মাস্ক পরছেন না। পুলিশের বক্তব্য, যাঁরা যত্রতত্র থুতু ফেলছেন, সেই তালিকাতেও শুধু যাঁরা পান-গুটখা খান, তাঁরা নন, নিছক বদভ্যাসবশত স্থান-কাল না-দেখে যেখানে সেখানে থুতু ফেলছেন, এমন লোকও রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধেও লাগাতার অভিযান চলছে বলে জানানো হয়েছে লালবাজারের তরফে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মার্চে লকডাউন শুরুর সময় থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত লকডাউন পর্বে মাস্ক না-পরার জন্য যত মামলা রুজু হয়েছিল, আনলক-ওয়ানের প্রথম তিন সপ্তাহেই সেই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর যত্রতত্র থুতু ফেলার প্রবণতা রয়েছে মোটামুটি একইরকম।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন মাসের গোড়া থেকে এ পর্যন্ত আনলক পর্বে মাস্ক না-পরার জন্য মামলা হয়েছে ন’হাজারের বেশি। যত্রতত্র থুতু ফেলার জন্য মামলা হয়েছে ৫৫৫টি। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত মাস্ক না-পরার জন্য সব মিলিয়ে মামলা হয়েছিল সাড়ে চার হাজারের মতো। এই আড়াই মাসে যত্রতত্র থুতু ফেলার জন্য মামলা হয়েছে এক হাজারের বেশি। উম্পুনের পর শহরে মাস্ক ও থুথু ফেলা নিয়ে কিছুদিন সে ভাবে অভিযান চালানো হয়নি। তবে আনলক পর্বে ফের মাস্ক ও থুতু ফেলা নিয়ে কড়া হচ্ছে পুলিশ। সচেতনতামূলক প্রচার, মাস্ক বিলি যেমন হচ্ছে, তেমনই বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে মামলাও রুজু করছে পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে মাস্ক থুতনির কাছে গুটিয়ে রেখে রাস্তায় যত্রতত্র থুতু ফেলার সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখেও যত্রতত্র থুতু ফেলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল। উম্পুনে অনেক সিসিটিভি সংযোগ নষ্ট হয়েছে। তারপরও অভিযানে ছেদ পড়েনি। তবে সবার আগে দরকার সচেতনতা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#mask, #covid-19

আরো দেখুন