দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

আম্পানের ত্রাণ না পেয়ে পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভ-ভাঙচুর

June 23, 2020 | 2 min read

বুলবুলের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই টানা লকডাউনে প্রবল অর্থকষ্টে দিন কাটছিল সাগরদ্বীপের হতদরিদ্র বাসিন্দাদের। এরমধ্যে আম্পানের তাণ্ডব যেন কফিনের শেষ পেরেকটাও পুঁতে দেয়। তবু যেন হুঁশ ফেরেনি কিছু লোকের। দুর্গতদের ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ যেমন উঠেছে, তেমনই ক্ষতিপূরণের তালিকায় স্বজনপোষণের কথাও উঠেছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষগুলো সোমবার যেন মরিয়া হয়ে ওঠেন। সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর-১ পঞ্চায়েতের গেট ভেঙে চলে সকলে ভেতরে ঢুকে পড়েন। চলে দেদার লুঠ। বাধা দিতে এলে আক্রান্ত হন প্রধান ও উপপ্রধান।

বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষতিপূরণের কুড়ি হাজার টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর তালিকা তৈরি নিয়ে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছিল। বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বহু বাসিন্দার সেই তালিকায় নাম ছিল না বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা বারে বারে পঞ্চায়েত-সহ সাগর ব্লক প্রশাসনের দারস্থ হয়েও কোন সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন। শেষে সোমবার সকালে দুর্গত এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা সাগরের ধসপাড়া সুমতিনগর-১ পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করেন। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশেপাশের গ্রাম থেকে আরও কয়েকশো মানুষ ভিড় জমায়। বিপদ আঁচ করে পঞ্চায়েতের গ্রিলের গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বাসিন্দারা গেট ভেঙে পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে পড়েন। তারপর চাল-ডালের বস্তা, ত্রিপল ও ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে চম্পট দেয় অনেকে। বাকিরা টেবিল, চেয়ার, অফিসের নথিপত্র রাস্তায় এনে ফেলে। ছ’টি বাইকেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।

বাধা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন পঞ্চায়েত প্রধান শোভা মাইতি, উপপ্রধান কৌশিক পাল। পঞ্চায়েত কর্মীদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠায় সাগর ও গঙ্গাসাগর উপকূল থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী চলে আসে। উত্তেজিত জনতাকে লাঠি উঁচিয়ে ছত্রভঙ্গ করেতে হয় পুলিশকে। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে উত্তেজিত বাসিন্দারা ৩৯ নম্বর বুথের সদস্য অনিতা মাইতির বাড়িতে চড়াও হয়। অনিতাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তা ছাড়া বাড়ি থেকে জিনিসপত্র বের করে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে সরিয়ে দেয়।

পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভ-ভাঙচুর

গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ,আম্পান ঝড়ে ক্ষতিপূরণের কুড়ি হাজার টাকা প্রধান, উপপ্রধান ও তৃণমূলের আত্মীয়দের পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। দল দেখে ত্রাণ বণ্টনেরও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েত প্রধান শোভা মাইতি বলেন, ‘কিছু মানুষ ছক কষে এই হামলা চালিয়েছে। এর পিছনে আমাদের দলেরও লোক ছিল।’ পঞ্চায়েত হামলার ঘটনায় বিজেপির উস্কানি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা। তিনি বলেন, ‘বিজেপি এ সব করাচ্ছে। ওরাই এলাকায় ঢুকে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছে। আমাদের এখানে ত্রাণ ও আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি।’ সাগরের বিজেপি নেতা রাজু মণ্ডল বলেন, ‘বুলবুলের পর আম্পানে ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এ দিন। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই।’

সোমবার পঞ্চায়েতে হামলার ঘটনায় রাত পর্যন্ত ২৫ জনকে আটক করা করা হয়েছে। আক্রান্ত প্রধান-‌সহ বাকিদের সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। পরে তাঁদের ছেড়েও দেওয়া হয়। সাগর থানায় লুঠ, ভাঙচুরের অভিযোগ দায়ের করেছে পঞ্চায়েত। পুলিশ হামলাকারীদের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু করেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#amphan relief, #sagar

আরো দেখুন