বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

মাহেশ – বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথ যাত্রার ইতিহাস

June 23, 2020 | 2 min read

কথিত আছে চতুর্দশ শতাব্দীতে ধ্রুবানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক ব্যক্তি পুরীতে তীর্থ করতে যান। তাঁর ইচ্ছে ছিল জগন্নাথদেবকে ভোগ খাওয়ানোর। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ তাতে বাঁধা দেন। মনের দুঃখে ধ্রুবানন্দ অনশন করে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবেন বলে ঠিক করেন। 

অনশনের তৃতীয় দিনে ধ্রুবানন্দ স্বপ্নাদেশ পান বাংলাতে ফিরে গিয়ে হুগলী নদীর ধারে মাহেশ বলে একটা জায়গায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করার। আদেশে এও বলা হয় যে ঠিক সময় মত নদীতে ভেসে আসা এক নিম কাঠ পাবেন ধ্রুবানন্দ, সেই কাঠ দিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, শুভদ্রার মুর্তি বানিয়ে নিজে হাতে তাঁদের ভোগ খাওয়াবেন।

দৈবাদেশ পেয়ে ধ্রুবানন্দ আসলেন মাহেশে। সেই সময় এই অঞ্চল ছিল জঙ্গলাকীর্ণ এবং শ্বাপদ সঙ্কুল। বহুদিন অপেক্ষার পর একদিন ভাগীরথীর তীরে ভেসে এলো এক নিম কাঠ। সেই থেকে মাহেশে জগন্নাথ মন্দির। এও বলা হয় যে সন্ন্যাস নেওয়ার পর নবদ্বীপ থেকে পুরী যাওয়ার পথে মহাপ্রভু মাহেশে এসেছিলেন। মাহেশের জগন্নাথ মন্দির দেখে তিনি মুগ্ধ হন ও এই মন্দিরের নামকরণ করেন ‘নব-নীলাচল’। বর্তমান মন্দিরটি ১৭৫৫ সালে তৈরি করেন কলকাতার নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক নামে এক ভক্ত। 

প্রথম রথটি কে নির্মাণ করে দিয়েছিলেন তা আজও অজ্ঞাত। রথের পরিবর্তন হয়েছে বেশ কয়েকবার। কোনও এক সময় এক ভক্তপ্রাণ মোদক থাকতেন বৈদ্যবাটিতে। তার অবদানে নির্মিত রথটি অচল হয়ে পড়ল এক সময়। শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম ভক্ত কলকাতার শ্যামবাজার নিবাসী বলরাম বসু। তার পিতামহ ছিলেন কৃষ্ণরাম বসু। তিনি একটি সুদৃশ্য উঁচু কাঠের রথ করিয়ে দেন ১৭৯৩ সালে। কালের নিয়মে সেটিও নষ্ট হয়ে যায়। 

মাহেশ রথ যাত্রা

কৃষ্ণরাম বসুর পুত্র গুরুপ্রসাদ বসু আবার রথটি নির্মান করে দিলেন ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে। সেই রথটি অগ্নিদগ্ধ হয়। ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় একটি নতুন রথ নির্মান করিয়ে দিলেন কালাচাঁদ বসু। এক সময় ওই রথটিতে এক ব্যক্তি মারা যান গলায় দড়ি দিয়ে। ফলে অপবিত্র জ্ঞানে পরিত্যক্ত হল সেই রথ। 

১৮৫৬ সালে আবার একটি রথ তৈরি করিয়ে দিলেন বিশ্বম্ভর বসু। সেটিও একদিন অগ্নিদাহে ভস্মীভূত হল। এরপর আর কাঠের নয়, তৈরি হল লোহার রথ। যেটি আজও টানা হয়। এটি নির্মিত হয় ১৮৮৫ সালে। দেওয়ান কৃষ্ণচন্দ্র বসুর অর্থে রথটি তৈরি করে দেয় মার্টিন বার্ন কোম্পানি। 

রথটি বাংলার নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি। উচ্চতায় ৫০ ফুট এবং ওজনে ১২৫ টন। মোট ১২ টা চাকার ওপর দাঁড় করানো। দূর-দূরান্ত থেকে এখনও বহু মানুষ আসেন। এখানের রথের মেলায় এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণও। ৬২৪ বছরের ইতিহাস আগলে রেখেছে এই মাহেশের রথ। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#oldest rath yatra, #mahes rath yatra

আরো দেখুন