কলকাতা পুরসভায় ১০০% কর্মী-হাজিরা বাধ্যতামূলক
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন অফিসের পাশাপাশি আজ, সোমবার পুরসভাগুলোতেও পুরোমাত্রায় কাজ শুরু হতে চলেছে। এরই মধ্যে নজির তৈরি করল কলকাতা পুরসভা। পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের পরামর্শে কলকাতা পুরসভা নির্দেশ জারি করে জানিয়েছে, ১০০ শতাংশ কর্মীকেই কাজে যোগ দিতে হবে। বর্তমান রাজ্য সরকার বন্ধ-ধর্মঘটের দিনে কর্মীদের ১০০ শতাংশ হাজিরা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু সাধারণ দিনে সব কর্মীকেই আসতে বলার নজির নেই। তার উপর এখন করোনা পরিস্থিতি।
এই ব্যাপারে কলকাতা পুরসভা যে কতটা কঠোর, তার প্রতিফলন রয়েছে হালের দু’টি নির্দেশনামায়। পুরসভার নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কাজে যোগ দেননি পুরসভার শিক্ষা বিভাগের ১১ জন অফিসার ও কর্মী। এর ফলে মিড-ডে মিল সরবরাহের কাজ বিঘ্নিত হয়। পুরসভার শিক্ষা বিভাগ ওই ১১ জন কর্মী-অফিসারের জুন মাসের বেতন না-দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আবার পুরসভার ট্রেজারি বিভাগ কাজে যোগ না-দেওয়া কর্মীদের উদ্দেশে নির্দেশ জারি করে বলেছে, পুরসভা প্রয়োজনে তাঁদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করবে। কিন্তু খরচের ভার ওই কর্মীদেরই বহন করতে হবে।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ১০০ শতাংশ কর্মী এলে অফিসের ভিতর সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কী ভাবে রক্ষা করা হবে? ফিরহাদের বক্তব্য, ‘পুরসভার কর্মীদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কাজ করানো হয়। তাই, কোনও নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে একসঙ্গে ১০০ শতাংশ কর্মীর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা কম। তাই করোনা-বিধি লঙ্ঘন করা হবে না।’
হাজিরা নিয়ে পুরসভার এই কঠোর মনোভাবের পিছনে রয়েছে উম্পুন-পরবর্তী পরিস্থিতি ও আসন্ন বর্ষা। চলতি সপ্তাহেই রাজ্যে বর্ষা ঢুকে পড়ার কথা। রবিবার বিকেলের বৃষ্টিতেও শহরের বেশ কিছু জায়গায় জল জমে যায়। বেশ কয়েকটি গাছও পড়ে। আজ, সোমবার ফিরহাদ যাবেন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের দু’টি নিকাশি খালের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখতে। তবে শুধু বর্ষাই নয়, উম্পুনের অভিঘাতে শহরের সামগ্রিক পুর পরিষেবা যে ভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল, তা দ্রুত পুনরুদ্ধার করাই পুরসভার লক্ষ্য। এখনও কিছু কিছু এলাকায় দুর্যোগের ক্ষতচিহ্ন রয়ে গিয়েছে। তাই, পরিষেবায় আপস করতে নারাজ পুর প্রশাসক ফিরহাদ।
ফিরহাদের যুক্তি, পুরসভা হল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। সেখানে ১০০ শতাংশ কর্মীর হাজিরা নিশ্চিত করা বেআইনি নয়। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই সিদ্ধান্তর সমালোচনা করেছেন। সূর্যর প্রশ্ন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কর্মীরা আসবেন কী ভাবে?’ বিকাশরঞ্জন এই সিদ্ধান্তকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যা দিয়েছেন।
লকডাউন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে মিড-ডে মিল দেওয়ার কাজ চালু রেখেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে কাজে অনুপস্থিত থাকায় পুরসভার শিক্ষা বিভাগের ১১ জন কর্মী ও অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই মর্মে পুরসভার শিক্ষা বিভাগের তরফে একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিভাগীয় লিখিত নির্দেশের পাশাপাশি বার বার ফোন করে বলা সত্ত্বেও কাজে না-আসার কারণে ওই ১১ জনের জুন মাসের বেতন কাটা হবে। সেই তালিকায় কয়েক জন সিনিয়র অফিসারও রয়েছেন। শিক্ষা বিভাগের ওই সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পেতে তার কাগজ পুর প্রসাশক ও পুর কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছেন কলকাতা পুরসভার চিফ ম্যানেজার (শিক্ষা) ও সিনিয়র (শিক্ষা) অফিসার।
যদিও পুরসভার বিশেষ কমিশনার তাপস চৌধুরী রবিবার জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কারও বেতন কাটা হয়নি। তবে ওই ১১ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। সব সার্ভিস রুল অনুযায়ী হচ্ছে। ওঁরা কলকাতায় থাকা সত্ত্বেও পুরসভার স্কুলের পড়ুয়াদের চাল-ডাল বন্টনের কাজে আসেননি।
যদিও তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নদিয়া, হিন্দমোটর, সুভাষগ্রাম ও বর্ধমানের বাসিন্দা। ফলে, লকডাউনে যানবাহন না-চলায় তাঁরা কী ভাবে কাজে যোগ দিতেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীদের ইউনিয়ন। বাম সমর্থিত পুরসভার ক্লার্কস ইউনিয়ন ওই নির্দেশের নিন্দা করেছে। আবার, ওই কর্মী-অফিসারদের মধ্যে বিটি রোড, উল্টোডাঙার কয়েক জন বাসিন্দা থাকায় তাঁদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য, শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কয়েক দিন অফিস যেতে পারিনি। আধিকারিকরা যেটা ভালো বুঝেছেন, সেটাই করেছেন।’