সংক্রমণ থামলেও করোনার দুশ্চিন্তায় ভুগতে পারেন এক কোটি মানুষ
কোভিড-১৯ সংক্রমণ থামার পরেও কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় এক কোটি দু’লক্ষ নাগরিকের মধ্যে ‘পোস্ট ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’ (পিটিএসডি)-এর আশঙ্কা রয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও তার সঙ্গে লকডাউন— এই জোড়া ধাক্কায় তাঁদের মানসিক স্থিতি টলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে একটি সমীক্ষা।
‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টস’ (আইএসিপি)-এর ‘ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট টাস্ক ফোর্স’-এর সদস্য তথা মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সায়কায়াট্রি’-র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্তকুমার রায়ের উদ্যোগে হওয়া একটি সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। লকডাউন পর্বে এই সমীক্ষাটি করতে প্রশান্তবাবুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন সঞ্জীব কুণ্ডু ও কাঞ্চন সেনগুপ্ত নামে আরও দু’জন।
জনমনে করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের প্রভাব জানতে সমাজের বিভিন্ন আর্থিক স্তর ও নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রায় এক হাজার জনের উপরে এই সমীক্ষাটি করা হয়েছে। কলকাতা, শহরতলি থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকার ১৮-৮০ বছর বয়সিদের সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে পড়ুয়া (পড়ুয়াদের মধ্যে দশম শ্রেণি পাশ করেননি এমনও রয়েছে, তেমনই রয়েছেন স্নাতক, স্নাতকোত্তরও), সরকারি চাকুরে, চুক্তিভিত্তিক কর্মী, বেসরকারি কর্মী, বেকার, অবসরপ্রাপ্তদের থেকে যেমন তথ্য সংগৃহীত হয়েছে, তেমনই ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ী, দিনমজুর, কৃষক, আপৎকালীন পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি, কৃষক, স্বাস্থ্যকর্মী, গৃহবধূও রয়েছেন।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় ৪৯.৩ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেই কোভিড ও লকডাউন কোনও না কোনও ভাবে প্রভাব ফেলেছে। যার মধ্যে ১০.৩ শতাংশের উপরে এই প্রভাব গুরুতর। রাজ্যের মোট জনসংখ্যা (কেন্দ্রীয় সরকারের ২০২০ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী), অর্থাৎ ৯ কোটি ৯৬ লক্ষের মধ্যে আনুমানিক চার কোটি ৯১ লক্ষ (অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ) নাগরিকের মানসিক স্থিতি টলিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘কোভিড ও লকডাউনের কারণে মানসিক স্থিতি যাঁদের বিপর্যস্ত হয়েছে, তাঁদের একটা বড় অংশই মানসিক, সামাজিক সহায়তা পেলে তা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু জনসংখ্যার প্রায় ১০.৩ শতাংশ, অর্থাৎ এক কোটি ২ লক্ষ ৫৯ হাজার মানুষের মধ্যে পরবর্তী কালেও পিটিএসডি, অবসাদ, উদ্বেগ-সহ গুরুতর মানসিক অসুখ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’
পারিবারিক আয়ের সঙ্গে যে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, তা একাধিক সমীক্ষায় প্রমাণিত। সংশ্লিষ্ট সমীক্ষাতেও দেখা গিয়েছে, যাঁদের পারিবারিক আয় মাসিক দশ হাজার টাকার নীচে, তুলনামূলক ভাবে তাঁরা অনেক বেশি বিধ্বস্ত। আবার ৪৫-৫৫ বছর বয়সিদের মধ্যেও বাড়তি মানসিক চাপ ধরা পড়েছে এই সমীক্ষায়। প্রশান্তবাবুর কথায়, ‘‘এই বয়সিদের দায়িত্ববোধ বেশি থাকার কারণেই মানসিক উদ্বেগও বেশি।’’
তবে মনোবিদদের একাংশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সার্বিক জনমানসের যে চেহারা দেখা যাচ্ছে, তা সাময়িক। এক মনোবিদের কথায়, ‘‘সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে এই মুহূর্তে কোভিড নিয়ে যে দুশ্চিন্তা দেখা যাচ্ছে, তা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁরাও ক্রমশ এই দুশ্চিন্তার আবহ থেকে বেরোতে পারবেন বলে আশা করা যায়।’’