‘চিন এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’, বার্তা চায়না টাউনের বাসিন্দাদের
“এ যদি আমার দেশ না-হয় তো কার দেশ বলো?”- কবীর সুমনের বিখ্যাত গানের কথাগুলোই যেন ইংরাজিতে বলে ফেললেন কাফা চুং। জাতে চিনে। নিবাস কলকাতার চায়না টাউনে (China Town)। বাংলাটা সেভাবে পড়ার সুযোগ পাননি। না হলে হয়তো “শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি”- উদ্ধৃতিটাও বলে ফেলতেন। কাফাদের মধ্যে ভারতের প্রতি এতটাই আবেগ লুকিয়ে রয়েছে। ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ‘ওয়ার ফ্রন্ট’ গিয়ে চিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেও এক পায়ে খাড়া কাফা, তাঁর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা।
কলকাতার চিনে পাড়ায় গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সাম্প্রতিক চিন-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি (Ladakh) নিয়ে। কাফা এবং চায়না টাউনের অন্যান্য বাসিন্দাদের বক্তব্য, “একশ বছরের উপর এ দেশে বাস করি। যে দেশের অন্নে পেট ভরে, সে দেশের জন্য প্রাণ দিতে পিছপা হব না। সরকার একবার বলে দেখুক, প্রমাণ দিয়ে দেব।”
এই প্রসঙ্গে আলাপটা শুরু হয়েছিল লাদাখ সংঘর্ষের পর চায়না টাউনের আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ঘিরে। চিনা দ্রব্য বর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় বসবাসকারী চিনা বাসিন্দাদেরও এখান বিতাড়িত করার ডাক দিয়েছিলেন কিছু ‘অত্যুৎসাহী দেশপ্রেমী’। গালওয়ানের ঘটনার পর চিনা পাড়ায় হামলার খবরও মিলেছিল। সেই তাণ্ডবের পর ঘরের দরজা এঁটে মহাকারুণিক গৌতম বুদ্ধের স্মরণ নিয়েছিলেন কাফা চুংরা। তারপর প্রশাসন ও স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি ফৈয়াজ খানের হস্তক্ষেপে পিছু হঠেন অতি উৎসাহীরা। ফৈয়াজ বলেছেন, “এঁরা চিনা বংশোদ্ভূত। কিন্তু আমাদের দেশের নাগরিক। এঁদের আঘাত করা মানে দেশকে আঘাত করা। এটা সবাইকেই বুঝতে হবে।”
কাফা চুঙের স্ত্রী জেসমিন। তিনি একটি এনজিও চালান এখানেই। রাস্তার ধারে নিতান্ত অবেহলায় দিন কাটানো বাচ্চাদের পড়াশোনা করান। “আমার মেয়ের মতোই বয়স বাচ্চাগুলোর। এদের শিক্ষিত করে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। এ কি আমার একার জন্য? দেশের জন্যই এই কাজ আমরা করে যাচ্ছি।”- বলছেন জেসমিন। কাফার বন্ধু স্টিফেন লি। তিনি বলেছেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে আমাদের ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে। আমরা ভারতের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমরাও যে ভারতকে কর দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাই, এ কথা নতুন করে জানানোর প্রয়োজন আছে কি?” লি’র পাশে দাঁড়িয়ে তখন মাইকেল, চুং, এমি। প্রত্যেকে একযোগে সায় দিলেন তাঁর কথায়।
জেসমিন আর কাফা জানিয়েছেন,তাঁদের পরিবারের অনেকে কানাডা চলে গিয়েছেন। শুধু চায়না টাউনের টানে তাঁরাই রয়ে গিয়েছেন এদেশে। চায়না টাউনের চিনা বাসিন্দারা ভারতের পাশে সর্বতোভাবে থাকার বার্তা দিতে একদিন বিকেলে পথে নেমেছিলেন। ছিলেন তৃণমূল নেতা জাভেদ খান, ফৈয়াজ খানরা। সেই মিছিলে ‘ওয়ার ফ্রন্ট’-এ গিয়ে শত্রুদেশের মোকাবিলার কথা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন চায়না টাউনের কয়েকশো বাসিন্দাদ
কলকাতার এই চিনে পাড়াতেই জন্ম শিবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের। গায়ে গা লাগিয়ে চিনেদের সঙ্গে বড়ো হয়েছেন। বয়স হয়ে গেল প্রায় ৬৭ বছর। চিনা কারখানায় কাজ করে পেট চালিয়েছেন। সাম্প্রতিক অবিশ্বাসের পরিস্থিতি তাঁকে আহত করেছে। চিনে প্রতিবেশীদের প্রতি কিছু মানুষের বিরূপ মনোভাবে ব্যথিত তিনিও। বৃদ্ধের প্রশ্ন, ”এ যদি এদের দেশ না হয় তো কার দেশ বলো?”