প্রধানমন্ত্রী কেন চিনকে সাহায্য করছেন? খোঁচা রাহুলের
চিনা সুরক্ষা বাহিনীর ‘ভারতীয় ভূখণ্ড দখল’ করার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লাগাতার আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। মোদীর সঙ্গে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধেও তিনি সমান তালে সুর চড়িয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেসের আক্রমণের নেতৃত্বই দিচ্ছেন রাহুল।
মঙ্গলবার সর্বশেষ ট্যুইটে রাহুল দাবি করেন, চলতি বছরের মে মাস থেকে বেশ কয়েক বারের চেষ্টায় দু’দেশের মধ্যে প্রায় ৩,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (LAC) লঙ্ঘনের মাধ্যমে চিন ভারতীয় জমি দখল করেছে। ভারত সরকার সেই জমি ফিরে পেতে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে চিনের দাবিকে সমর্থন করে মেনে নিচ্ছেন যে জমিটি (গলওয়ান উপত্যকা) ভারতের নয়।
ট্যুইটে রাহুল লেখেন, ‘চিন আমাদের জমি দখল করেছে। ভারত এটি ফিরে পাওয়ার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। চিন বলেছে, এটি ভারতের ভূমি নয়। প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে চিনের দাবি সমর্থন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কেন চিনকে সমর্থন করছেন? কেন ভারত এবং আমাদের সেনাবাহিনীকে সমর্থন করছেন না?’
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ডেপি নাড্ডা, বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এদিন পালটা আক্রমণ করেন রাহুলকে। তাঁদের বক্তব্য, গলওয়ান ইস্যুতে ভারতের রাজনৈতিক শক্তির যে সময় একতা দেখানো প্রয়োজন, তখন রাহুল ক্ষুদ্র রাজনীতি করছেন। শিবরাজের মন্তব্য, ‘রাহুল গান্ধী সেনাবাহিনীকে হতাশ ও অপমান করছেন। বিজেপি কঠিন সময়ে কংগ্রেসকে সমর্থন করত। কিন্তু, কংগ্রেস নোংরা রাজনীতি করছে। চিনকে আক্রমণ করা উচিত। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী মোদী ছাড়া তারা অন্য কাউকে দেখতে পায় না।’ সেই সমালোচনায় এতটুকু না দমে চিনের ভারতীয় ভূ-খণ্ড দখল বিষয়ে দ্বিতীয় ট্যুইটটি করেন রাহুল গান্ধী।
পূর্বের লাদাখের এলএসি-এর পাশে গালওয়ান উপত্যকায় যখন ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল, যখন চীনা সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের সময় ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছিল, ১৫ ই জুনের ঘটনা নিয়ে আলোচনার জন্য ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তার দলের কৌশল নিয়ে রাহুলের আক্রমণ সামঞ্জস্যপূর্ণ স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিতর্কিত এলএসি-র ভারতীয় পক্ষের কাঠামো খাড়া করার চেষ্টা করছে।
১৫ জুনের সন্ধ্যায় লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পার করে চিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করা সত্ত্বেও সর্বদলীয় বৈঠকে কার্যত তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন মোদী। ভারতীয় সেনার ২০ জন নিহত হলেও চিনের নামোল্লেখ না করে অনুপ্রবেশ নিয়ে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘ওখানে কেউ আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে পড়েনি। ওখানে আমাদের এলাকায় কেউ ঢুকেও বসে নেই। আমাদের কোনও পোস্ট (সেনা চৌকি) অন্য কারও দখলেও নেই।’ মোদীর এই মন্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় দেশের রাজনৈতিক তথা কূটনৈতিক মহলে। এ নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্র করেন রাহুলও। তিনি প্রশ্ন করেন, টযদি কেউ (ভারতীয় ভূখণ্ডে) না-ই ঢুকে থাকে, তা হলে ভারতীয় সেনারা কোথায় এবং কী ভাবে মারা গেলেন?’ এতে ক্ষান্ত হননি তিনি। এর পর একের পর প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন শাসকদল বিজেপিকে।
চিন যে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে গালওয়ান উপত্যকায় হামলা চালিয়েছে, তা-ও দাবি করেন রাহুল। দেশের সরকারের ব্যর্থতার জন্যই যে সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রাণ দিয়ে তার মূল্য চুকিয়েছেন, সে কথাও বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ভারতের ভূ-খণ্ডকে চিনের কাছে সমর্পণ করার সমতুল্য বলেই মনে হয়েছে কংগ্রেসের। কংগ্রেস আরও মনে করছে, গলওয়ান উপত্যকায নিয়ে মোদীর এই বক্তব্য চিনাদের দাবির ভার্চুয়াল সমর্থন। সেই অবস্থান থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল।
প্রধানমন্ত্রীর মতে, চিনা সেনাবাহিনী আমাদের অঞ্চলগুলিতে অনুপ্রবেশ করেনি। তা হলে কেন, ২০ জুন (২০২০) সন্ধ্যায় বিদেশমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, ২০২০-র মে মাসের শুরু থেকেই চিনা সেনাবাহিনী ভারতীয় টহলকে বাধা দিচ্ছে? এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস।
লাদাখের দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও চিন কেন মোদীর প্রশংসা করে চলেছে, তা নিয়েও আগের দিন প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। ‘সারেন্ডার মোদী’ বলে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। লাদাখে চিনা আগ্রাসনের ফলে ভারতীয় সেনা হতাহতের ঘটনার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লাগাতার তোপ দেগে চলেছেন রাহুল। অনুপ্রবেশের পরেও মোদী যে ভাবে তা নস্যাৎ করে দিয়েছেন, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাহুল। শুধুমাত্র প্রশ্ন তুলে থেমে থাকেননি। চিনের সরকারি মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত সংবাদপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘চিন আমাদের সেনানীদের হত্যা করেছে। চিন আমাদের ভূখণ্ড কেড়ে নিয়েছে। তা হলে এই দ্বন্দ্বের সময়েও চিন কেন মিস্টার মোদীর প্রশংসা করছে?’
‘গ্লোবাল টাইমস’-এ সর্বদলীয় বৈঠকে মোদীর ভাষণের প্রশংসা করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে এ-ও দাবি করা হয়েছে, চিনের সঙ্গে যুদ্ধে পেরে উঠবে না ভারত। সব জেনেবুঝেই দেশের জনগণকে তুষ্ট করতে এবং ভারতীয় সেনার মনোবল বাড়াতে সংঘর্ষ এড়াতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এবং সে কারণেই শব্দ নিয়ে খেলা করছেন তিনি।
এদিন রাহুলের প্রথম ট্যুইটি ছিল, ‘আমরা চিনা আগ্রাসনের (Chinese aggression) বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। চিনারা কি ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করেছে?’