ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনে চীনের ভূমিকা
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির গঠনে লেনিনের নেতৃত্বাধীন রুশ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ প্রভাব যেমন অনস্বীকার্য তেমনি এর বিভাজনে মাও জে দং এর নেতৃত্বাধীন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
১৯২০ সালে সোভিয়েতের তাসখন্ডে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই)গঠিত হয় মার্কসবাদ লেনিনবাদী আদর্শে ভারতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ১৯৬২ সালে ইন্দো-চীন যুদ্ধের আবহে কমিউনিস্ট পার্টির একটি অংশ চীনের বিরুদ্ধে সরাসরি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুকে নি:শর্ত সমর্থন করে।
অপর অংশ চীনের বিরূদ্ধতার পাশাপাশি নেহরুর প্রতি সমর্থনের তীব্র বিরোধিতা করে। কারণ হিসেবে তারা কংগ্রেসের মত একটি জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়াদের রাজনৈতিক দলের প্রতি আস্থাকে প্রতিক্রিয়াশীল বা রিভিশনিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করে। তৃতীয় অংশটি আবার চীনের প্রতি মৃদু সমর্থন ব্যক্ত করে।
শেষাবধি ১৯৬৪ সালে কলকাতার ত্যাগরাজ হলে সিপিআই বিভাজিত হয়ে সিপিআই(এম) গঠিত হয়। এস এ ডাঙ্গের নেতৃত্বে মূল অংশটি পুরনো দলে এবং নাম্বুদ্রিপাদ,মোজফ্ফর আহমেদ,জ্যোতি বসুরা বেরিয়ে এসে সিপিআই(এম) গঠন করেন। এটি প্রথম বিভাজন যেখানে পরোক্ষে হলেও চীনের উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না ।
এরপর ১৯৬৭ সালে পশ্চিম বাংলায় প্রধান শক্তি সিপিআই(এম) এর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন, পরিচালনায় পার্টি পাকাপোক্ত ভাবে সংসদীয় ব্যব্স্থার প্রতি আস্থাশীল হিসেবে উঠে আসে যা দলের জঙ্গী বিপ্লবী অংশটির আস্থা হারায়। তারা বুঝতে পারে এই সরকারের দ্বারা তাদের ভাবনা অনুযায়ী কোন বৈপ্লবিক কাজই সম্ভব নয়। এবং তারা সিপিআই(এম)কেই মার্কসবাদ বিচ্যুত,প্রতিক্রিয়াশীল,বুর্জোয়াদের সঙ্গে সমন্বয়কারী ও বিপ্লবের দুশমন বলে অভিযুক্ত করে।
শুধু তাই নয় লেনিন স্তালিনের শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে বিপ্লবের মার্কসবাদী তত্ত্বের বিপরীতে গিয়ে মাও জে দং এর কৃষকদের বিপ্লবের চালিকা শক্তি হিসেবে ঘোষনা,তাদের নেতৃত্বে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার মধ্য দিয়ে সসস্ত্র বিপ্লবের তত্ত্বকে মান্যতা দেয় এবং চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবকে সমর্থন করে। এদের বক্তব্য ছিল সসস্ত্র বিপ্লবই একমাত্র পথ,বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস। এরা বলেন,” চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান “।
শেষাবধি চারু মজুমদারকে সভাপতি করে ১৯৬৯ সালে কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল সহ এই অংশটি সিপিআই (এম এল) গঠন করেন এবং উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে নক্সালবাড়ি থেকে দলের কাজ শুরু করেন যার জন্য এই আন্দোলন নক্সাল আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে।
ব্যাক্তি খুনে বিশ্বাসী এই দল দেশের চালু শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে, এবং মনীষীদের মূর্তি ভাঙা এদের কার্যক্রমে যুক্ত হয । এদের এই আন্দোলন চীনের নৈতিক ও প্রত্যক্ষ সমর্থন লাভে সক্ষম হয়। কমিউনিস্ট পার্টির এই বিভাজনে কিন্তু মাও জে দং এর রাজনৈতিক লাইন ও চীনের প্রত্যক্ষ সমর্থন মূখ্য ভূমিকা পালন করেছে ।