সব পুরসভাতেই মাটির নীচ দিয়ে কেবল নেওয়ার উদ্যোগ রাজ্য পুরদপ্তরের
শহর মানেই মাথার উপরে তারের জঙ্গল। বিদ্যুৎ, কেবল লাইন, টেলিফোন, ইন্টারনেট— একের পর এক তারের চাপে দুর্বল হয়ে পড়ছে খুঁটিগুলি। ঝড়ঝাপ্টায় তা থেকেই ঘনাচ্ছে বিপদ। ঘূর্ণিঝড় উম-পুন থেকে শিক্ষা নিয়ে শহরে তারের জটের চেনা ছবি এবার বদলাতে চলেছে গোটা রাজ্যেই। কলকাতা সহ রাজ্যের সবক’টি পুরসভায় যাবতীয় কেবল অর্থাৎ বিভিন্ন পরিষেবার তার মাটির নীচ দিয়ে নিয়ে যেতে চায় নবান্ন। দৃশ্য দূষণ রুখতে ইতিমধ্যে বিধাননগর পুরসভার অন্তর্গত সল্টলেক সেক্টর ফাইভে এই কাজ হয়েছে। নিউটাউনেও সব কেবল লাইন মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। এবার সেই কাজ শুরু করা হবে দুই ‘হেরিটেজ টাউন’— কোচবিহার ও নবদ্বীপে। গ্রিন সিটি মিশনের আওতায় দুই শহরে মাটির উপরে কোনও কেবল রাখা হবে না। তার প্রস্তুতি চলছে। ধাপে ধাপে রাজ্যের বাকি ১২৫টি পুরসভাতেও এই ভাবে আকাশ মুক্ত রাখার পরিকল্পনা করছে রাজ্য পুরদপ্তর।
দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টির চর্চা চলছে নবান্নে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছিলেন। উদ্যোগ নিয়েছিল কলকাতা পুরসভাও। কিন্তু কাজ আরম্ভ করা যায়নি। এবার গ্রিন সিটি প্রকল্পের অধীনে বিষয়টি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বিষয়টি নিয়ে এক দফা বৈঠক করেছেন। মাইক্রো টানেলিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্প করা হবে। মাটির নীচে মাইক্রো টানেল দিয়ে যাবতীয় তার নিয়ে যেতে পারলে ঝড়-বৃষ্টিতে সমস্যা হবে না বলেই এই উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।
প্রাথমিক স্তরে আলোচনার বিষয়ে ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের সময় তার ছিঁড়ে বেশ কয়েকদিন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছিল। যার জেরে চরম সমস্যায় পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। নাগরিকদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই মাটির নীচ দিয়ে যাবতীয় কেবল লাইন নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে নিউটাউন, সেক্টর ফাইভে এই কাজ হয়েছে। রাজ্যের বাকি শহরে তা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর জন্য এক দফা বৈঠক হয়ে গিয়েছে। কলকাতা পুরসভার সংযোজিত এলাকায় যেখানে সিইএসসির বিদ্যুতের তার উপরে আছে, তাও মাটির নীচে দিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’ কিন্তু বিপুল এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধ সেধেছে খরচ। গোটা প্রক্রিয়ার পরিকাঠামো তৈরি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় চিন্তা বেড়েছে রাজ্য সরকারের। ব্যয়ভার কমাতে এই কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট টেলিকম সংস্থা, কেবল অপারেটর বা এমএসও’দের থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারেও প্রাথমিক ভাবনাচিন্তা করছে সরকার। তবে তাতেও সমস্যা মিটবে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।