অবসাদ কাটাতে লুডো খেলায় মন করোনা আক্রান্তদের
ছক্কা-পাঞ্জায় কখন যেন সময় কেটে যাচ্ছে। দৈনন্দিন সংসারের উত্তেজনা নয়, কার পাকা ঘুঁটি কেটে দিয়ে গেল কে, তা নিয়েই এখন ‘আসর গুলজার’। পরিবার-পরিজন থেকে দূরে, সেফ হোমে দিন কাটাচ্ছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক করোনা আক্রান্ত। তাঁদেরই বিনোদনের জন্য লুডো খেলার ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন। শরীরে রোগের কোনও বহিঃপ্রকাশ না থাকলেও যাতে তাঁদের থেকে সংক্রমণ না ছড়ায়, সেজন্য আলাদা করে রাখা হচ্ছে ওই সেফ হোমগুলিতে। তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর মন মেজাজ ভাল রাখতে ভরসা লুডোর বোর্ড।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, জেলার সেফ হোমগুলিতে করোনা আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্যে যাতে কোনওরকম প্রভাব না পড়ে, তার জন্য আমরা সবসময় কাজ করছি। সেফ হোমগুলিতে থাকতে থাকতে যাতে তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন, সেজন্য লুডো খেলার ব্যবস্থা করেছি।
টিভির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। প্রতিটি সেফ হোমে লুডোর বোর্ড ও ঘুঁটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। টিভিও কেনা হয়ে গিয়েছে। খুব দ্রুত সেফ হোমগুলিতে টেকশিয়ান দিয়ে টিভিও লাগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি সেফ হোমে থাকা রোগীদের জন্য সাপ্তাহিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করা হবে।
জানা গিয়েছে, এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার করে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের কাউন্সেলিং করবেন। তাঁদের মনোবল বাড়িয়ে তোলাই লক্ষ্য। সেইসঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্য ও প্রয়োজনীয় নজরদারি তো থাকছেই।
এ যাবৎ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পাঁচ জায়গায় সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে। বালুরঘাট মহকুমার পতিরাম পথসাথীতে ১০ বেডের, তপন কিষাণমাণ্ডিতে ১০ বেডের, বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রে ৬৫ বেডের, গঙ্গারামপুর মহকুমার রাজীবপুর হলিক্রসে ১০ বেডের ও হরিরামপুরের গোকর্ণে ৯০ বেডের লেভেল-৩ করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অবশ্য সেফ হোমের পরিকাঠামো নিয়ে একাধিক অভিযোগও উঠেছে। কোথাও অভিযোগ উঠেছে, সেফ হোমেই করোনা আক্রান্তের সঙ্গে রাখা হচ্ছে কোয়ারেন্টাইনে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের। আবার কোথাও অভিযোগ উঠেছে, সেফ হোমে ঠিকমতো খাদ্য মিলছে না বা প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থা নেই। তবে জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, সমস্যার কথা শোনামাত্রই তা সমাধান করা হয়েছে। হরিরামপুর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌভিক আলম বলেন, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আক্রান্তদের যাতে মানসিক অবসাদ ও অন্য কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর আক্রান্তদের সঙ্গে গল্পগুজবও করেন নিয়মিত।
বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রে রয়েছেন করোনা আক্রান্ত চারজন স্বাস্থ্যকর্মী। তাঁরা বলেন, বর্তমানে সেফ হোমে ভালোই পরিষেবা মিলছে। প্রথমদিকে সামান্য সমস্যা হলেও এখন সব ঠিক রয়েছে। অবসর বিনোদনের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে আমাদের লুডো পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে লুডো খেলে, গল্প করে অবসর বিনোদন করছি ।