জানুন বিপত্তারিণী দেবীর ইতিকথা
বিপত্তারিণী দেবী হলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পূজিত এক হিন্দু দেবী। এই দেবী সঙ্কটনাশিনীর একটি রূপ এবং দেবী দুর্গার ১০৮ অবতারের অন্যতম। হিন্দুরা মূলত বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য এই দেবীর পুজো করে থাকে। আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে হিন্দু মহিলারা বিপত্তারিণী ব্রত পালন করেন। জগন্নাথদেবের রথ এবং উল্টো রথের মধ্যে মঙ্গল বা শনিবারে এই পুজো হয়।
বিপত্তারিণীর পুজো হিন্দু নারীরা ব্রতের আকারে পালন করেন। এই ব্রতে পাঁচালি আকারে বিপত্তারিণীর কিংবদন্তীটি পাঠ করা হয়। মল্লভূম রাজ্যের (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত বিষ্ণুপুর, খ্রিস্টীয় ৭ম থেকে ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত এই রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল) রানির এক সখী ছিলেন যিনি জন্মগত ভাবে মুচি বংশের। মুচিরা মাঝে মাঝে গোমাংস খেত। এই কথা শুনে রানি খুব ভয় পেয়ে যান। কারণ, হিন্দুধর্মে গোমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ। তবে একবার কৌতূহলী হয়ে রানি গোমাংস কেমন হয় তা দেখতে চান। একদিন রানি তার সখীকে তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানান।
সখী প্রথমে দেখাতে অস্বীকার করেন। কারণ এতে ধর্মপ্রাণ রাজা রেগে যেতে পারেন বলে তাঁর ভয় হয়। কিন্তু পরে বাধ্য হয়ে তাকে রানির অনুরোধ রাখতেই হয়। কিন্তু কেউ রাজাকে এই খবর জানিয়ে দেয়। রাজা রানিকে হত্যা করতে আসেন। রানি নিজের কাপড়ে তলায় গোমাংস লুকিয়ে রেখে দেবী দুর্গার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। রাজা এসে তাঁর কাপড়ের নীচে কি রাখা আছে দেখতে চান। তিনি দেখেন, সেখানে একটি লাল জবা ফুল রাখা আছে। সেই থেকে আজও বিপত্তারিণী পুজো পারিবারিক সঙ্কট মোচনের জন্য করা হয়ে থাকে।
মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে এই পুজোয় ১৩টি ফল, ১৩টি ফুল, ১৩টি পান সুপারি ও ১৩টি নৈবেদ্য কথা বলা হয়। অর্থাৎ সনাতন শাস্ত্রানুসারে কিন্তু ১৩ সংখ্যাটি আদৌ অশুভ নয় ৷ গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পুজো চারদিন ধরে চলে। প্রথম দিনে দেবীর “আরাধনা” (পুজো) করা হত। মেয়েরা দণ্ডী কাটে। তারপর দুই রাত্রি ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তন চলে। চতুর্থ দিনে বিসর্জন হয়। বিপত্তারিণী পুজো উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করে। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” (এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস) বাঁধে৷