‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লোগোয় মুখ ঢাকছে শাওমি স্টোর
চীন -ভারত সীমান্ত উত্তেজনার রেশে দোকান ভাঙচুর হওয়ার আশঙ্কায় চীন হ্যান্ডসেট নির্মাতা সংস্থা শাওমি তাদের সমস্ত আউটলেটে এমআই-শাওমি ব্র্যান্ডের নাম সাদা রঙের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লোগো দিয়ে ঢাকার কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে চীনা পণ্য বয়কটের যে ডাক উঠেছে, তাতে সাড়া দিয়ে মোবাইল সেট বিক্রির বিপণিতে মানুষজন ভাঙচুর চালাতে পারে বলে অল ইন্ডিয়া মোবাইল রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইএমআরএ) চীনা মোবাইল ব্র্যান্ডগুলিকে লিখিত ভাবে আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে বিপণিগুলিতে তাদের ব্র্যান্ডের নাম ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ লোগোতে ঢেকে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে বিক্রির নিরিখে ভারতের বাজারে এক নম্বর স্মার্টফোন ব্র্যান্ড শাওমি।
এআইএমআরএ জাতীয় সভাপতি অরবিন্দর খুরানা বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা বিপণিগুলির সামনে থেকে তাদের সাইনবোর্ড সরিয়ে দেওয়া বা কাপড় অথবা ফ্লেক্স দিয়ে সেগুলি ঢেকে দেওয়ার জন্য চীনা ব্র্যান্ডগুলিকে অনুরোধ করেছিলাম। শাওমি নিজেরাই তাদের বোর্ডগুলির উপর সাদা রঙ দিয়ে মেড ইন ইন্ডিয়া ব্যানার লিখছে অথবা টাঙিয়ে দিচ্ছে, যাতে ব্র্যান্ডের নাম সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যায়।’ তবে অন্য চীনা মোবাইল ব্র্যান্ডগুলি এখনও কোনও পদক্ষেপ না করলেও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। এ ব্যাপারে শাওমি-র তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
খুরানার অভিযোগ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু বাজারে বেশ কিছু সমাজবিরোধী গিয়ে মোবাইল সেট বিক্রির বিপণিগুলিতে বিবিধ চীনা সংস্থার নাম সরিয়ে দিতে বলেছে এবং তা না করলে তারা দোকান ভাঙচুর করার হুমকিও দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘উত্তেজনা বাড়লে বিপণি মালিকদের সুরক্ষা বিপন্ন হতে পারে। ডিসপ্লে বোর্ডে চীনা সংস্থার নাম থাকাটা কোনও ভাবেই মালিকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’
ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের জিগিরের খানিকটা প্রভাব মোবাইল বিক্রির উপর পড়েছে বলেও তিনি জানান। তাঁর কথায়, ‘অনেক ক্রেতাই বলছেন তাঁদের যেন চীনা ব্র্যান্ডের কোনও হ্যান্ডসেট না দেখানো হয় এবং এর সুফল পাচ্ছে স্যামসাং। কারণ, বিভিন্ন চীনা সংস্থা বাদ দিলে তারাই ভারতের বাজারে বিক্রির নিরিখে প্রথম সারির মোবাইল ব্র্যান্ড।’
শাওমি ইন্ডিয়া হেড মনু জৈনও জানিয়েছেন, চীন-বিরোধী মনোভাব মূলত সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ এবং এতে ভারতে সংস্থার ব্যবসার উপর কোনও প্রভাব পড়েনি। বুধবার এক ট্যুইটে তিনি মন্তব্য করেন, অনলাইন সেলে ৫০ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতে শাওমি-র রেডমি নোট৯ প্রো ম্যাক্স-এর সমস্ত মজুত বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে অন্য কোনও সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও তাঁদেরও বক্তব্য যে চীনা পণ্য বয়কটের ডাকে বিক্রিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি।
বরং, দু’মাস লকডাউনের জন্য বাড়ি থেকে অফিস, ব্যবসার কাজ ও স্কুলের অনলাইন ক্লাসের কারণে চলতি মাসে স্মার্টফোনের চাহিদা বেড়েছে এবং তা মেটাতে অনেক সংস্থাই আমদানি করছে। এখন অবশ্য ভারতেই হ্যান্ডসেট উৎপাদন করার কারখানা চালু করে দিয়েছে শাওমি, অপো, ভিভো-র মতো প্রথম সারির সমস্ত চীনা ব্র্যান্ডই। কেন্দ্রের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন উৎপাদনের কারখানা নয়ডায় গড়ে তুলেছে দক্ষিণ কোরীয় সংস্থা স্যামসাং। কিন্তু, তাতেও ভারতে বিক্রি হওয়া কোনও স্মার্টফোনই ১০০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত নয়।
কেন? কারণ, ভারতে সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদনের জন্য একটিই ইউনিট রয়েছে। ইসরো ওই সেমিকন্ডাক্টর ওয়াফার ফ্যাব্রিকেশন বা ফ্যাব ইউনিটটি পরিচালনা করে। ফলে, ভারতে স্মার্টফোনের ৯৯ শতাংশ উৎপাদিত হলেও ডিভাইসের সেমিকন্ডাক্টর চিপ চীন সহ বিদেশের কতিপয় দেশ থেকে আমদানি করতেই হয়। তাই স্মার্টফোন ক্ষেত্রে চীন নির্ভরতা একেবারে দূর করতে হলে ভারতে একাধিক ফ্যাব ইউনিট গড়ে তুলতে যেমন কয়েক লক্ষ কোটি টাকার লগ্নি প্রয়োজন, তেমনই চিপ উৎপাদন শুরু হতেও ৫-৭ বছর সময় লাগবে।