বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

নিরন্তর – নিপুণ দক্ষতায় বিষন্নতার কোলাজ এঁকেছেন চন্দ্রাশিস রায়

June 28, 2020 | 2 min read

একজন কাহিনীকারের কাজ হল গল্প বলা। আর এক পরিচালকের কাজ যে গল্পটি তিনি নিজের মনে মনে বুনেছেন, সেটি পর্দায় তুলে ধরা। এই দুই ক্ষেত্রেই ফুল মার্কস নিয়ে পাস করেছেন পরিচালক চন্দ্রাশিস রায়। ওনার প্রথম ছবি ‘নিরন্তর’ আজ মুক্তি পেল। তবে বড়পর্দায় নয়, ছোটপর্দায়। নৈপুণ্যের সাথে একের পর এক দৃশ্য গেঁথেছেন পরিচালক, যাতে পেশাদারিত্বের ছাপ রয়েছে। চিত্রনাট্য থেকে সঙ্গীত, চিত্রগ্রহণ থেকে অভিনয় – সব বিভাগেই লেটার।

মন ছুঁয়ে যাওয়া গল্প নিরন্তর। ভাবিয়ে তোলার গল্প। এখানে নেই কোনও মেলোড্রামা, নেই মেকআপের আতিশয্য। সংলাপও সীমিত। ১০০ মিনিট ধরে শুধু মানুষগুলোকে অনুভব করে যেতে হবে। না বলা কথাগুলোর মাঝে লুকিয়ে থাকা গল্পটাকে কান পেতে শুনতে হবে। ‘নিরন্তর’ বিষাদের গল্প। না পাওয়ার কষ্টের গল্প। সব থেকেও অসম্পূর্ণতার গল্প। নিজেকে খুঁজে বেড়ানোর গল্প। ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাওয়ার জীবনযুদ্ধের গল্প।

নিরন্তর – নিপুণ দক্ষতায় বিষন্নতার কোলাজ এঁকেছেন চন্দ্রাশিস রায়

বিপ্লব ও জোনাকি – এক নিঃসন্তান দম্পতি। মিসক্যারেজ হওয়ার পর থেকে দাম্পত্যে চিড় ধরেছে। পালিয়ে বেড়ায় বিপ্লব। ওষুধকেই জীবন বানিয়েছে জোনাকি। আরেকদিকে ভাস্কর। খুব ভালোবাসে তার স্ত্রীকে। সন্তানসম্ভবা সে। কিন্তু বাড়িতে এই বিয়ে নিয়ে অশান্তি। সিনেমা শুরু উত্তরবঙ্গে। প্রকৃতির কোলে বিপ্লব ও ভাস্কর হোটেল তৈরির জন্য সাইট খুঁজতে গেছে। তাঁদের পাঠিয়েছে কোম্পানিই। অসম বয়সী এই দুইজন এই ট্যুরে বন্ধু হয়ে ওঠে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা বদলে দেয় সব হিসেবনিকেশ।

বিপ্লবের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ। তাঁর আভিনয় জীবনের অন্যতম সেরা চরিত্র প্রাপ্তি হল দর্শকের। নীরব অভিব্যক্তিতে সাবলীল ভাবে তিনি বলে গেলেন বেদনার মহাকাব্য। বিষন্নতা, হতাশা, যন্ত্রণা যে তাকে ভেতর থেকে ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে, আভাস পাওয়া যায় তার চোখে। তাকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন সত্যম ভট্টাচার্য, ভাস্করের চরিত্রে। প্রথম দিকের খিটিমিটি, বসকে সমীহ করে চলা, সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে না থাকার দুঃখ, বারবার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা – কি স্বাভাবিক অভিনয়।

ছবিজুড়েই এক একটা মনছোঁয়া মুহূর্ত তৈরি হয়। সমীক হালদার তাঁর ক্যামেরার দৌলতে সূক্ষ্ণ অনুভূতিগুলিকে অকপটে তুলে ধরেছেন। উত্তরের বন্ধনহীন প্রকৃতি হোক কিংবা সন্ধ্যের মায়াবী কলকাতা – পর্দার ক্যানভাসটা ভরিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিশেষভাবে বলতে হয় সঙ্গীতের কথাও। ‘কাজরি’ রাগটির ব্যবহার অসাধারণ। ‘বরসন লাগে বাদরিয়া’ যেন জীবনের সব দুঃখ ঘুচিয়ে বৃষ্টি নামিয়ে আনে।

সিনেমাটি দেখতে দেখতে কখন যেন দর্শক নিজেকে হারিয়ে ফেলে চরিত্রগুলির সঙ্গে। একাত্ম হয়ে যায় গল্পের সাথে। বৃষ্টির ধারার মত বহমান সময়টা ধরে রাখতে চায় ‘বরসন লাগে বাদরিয়া’ গানে। চন্দ্রাশিস আচার্যের এই ছবি দেখার পর মন শুধু একটাই কথা বলে, “শেষ হইয়াও হইল না শেষ”।

রেটিং: ৪/৫ স্টার

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengali Cinema, #Nirontor

আরো দেখুন