ভাগীরথীতে বাড়ছে ডলফিন
আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার)-এর লাল তালিকায় তারা বিপন্ন। সেই বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিনের সংখ্যা বাড়ছে ভাগীরথীতে। কাটোয়ার যে অংশে ভাগীরথী প্রবাহিত, খাবারের জোগান থাকায় আশপাশের এলাকা থেকে ডলফিনের দল সেখানে ডেরা বেঁধেছে। চলতি বর্ষায় এই অঞ্চলে আনুমানিক ১১টি ডলফিন প্রসব করেছে সন্তানও। গত বর্ষায় এই সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৬। সদ্যোজাত সবক’টি ডলফিন বেঁচে থাকলে ভাগীরথীর শুধুমাত্র কাটোয়া অঞ্চলে গাঙ্গেয় ডলফিনের সংখ্যা দাঁড়াবে আনুমানিক ৩২। বন দপ্তর ও ডলফিন পর্যবেক্ষকদের মতে বিগত ৪ বছরে এই সংখ্যা সর্বাধিক।
ভাগীরথীকে ডলফিনের বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। কাটোয়া বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ অফিসার সুকান্ত ওঝা বলেন, ‘এই এলাকায় নদীতে ডলফিন বাড়ছে এটা আমাদের কাছে একটা বড় প্রাপ্তি। আমরা সব সময়েই চেষ্টা করছি ডলফিনগুলিকে নিরাপত্তা দিতে।’
নয়াচরে ডলফিন নিয়ে গবেষণা করা নেচার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সোসাইটি (নিউস)-র পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে ডলফিনের সংখ্যা বৃদ্ধির ঘটনা। সংস্থার প্রধান গণেশ চৌধুরী জানাচ্ছেন, ১০ বছর ধরে তিনি এই অঞ্চলে ডলফিন নিয়ে কাজ করছেন। বছর ৮ আগে এই অঞ্চলে আনুমানিক ৭০টি ডলফিন বিচরণ করত। কিন্ত ২০১৬-১৭ তে সংখ্যাটা কমতে কমতে ২০-র আশপাশে চলে আসে। সম্প্রতি এই এলাকায় ডলফিনের সংখ্য্যা ছিল আনুমানিক ২১টি। তাদের মধ্যে ১১টি ডলফিন বাচ্চা দেওয়ায় সংখ্যাটা বেশ কিছুটা বাড়ল। গণেশ বলেন, ‘এই অঞ্চলের ডলফিন নিয়ে আমি ও আমার সহযোগীরা দীর্ঘদিন কাজ করছি। এখানকার ডলফিনের গতিবিধি দিনের পর দিন পর্যবেক্ষণ করেছি। এ বছর বর্ষার শুরুতে ১১টি গর্ভবতী ডলফিন আমাদের চোখে পড়েছিল। এখন সবগুলোই সন্তান প্রসব করেছে। অর্থাৎ আনুমানিক ১১টি ডলফিন বাড়ল এই এলাকায়।’
তবে কল্যাণপুর থেকে পাটুলি পর্যন্ত এলাকায় ডলফিনের সংখ্যা বাড়লেও, সামগ্রিক ভাবে ভাগীরথীতে তাদের সংখ্যা কমছে বলেই জানাচ্ছেন গণেশ। বলেন, ‘এখানে ডলফিনের সংখ্যা বেড়েছে মানে এই নয় যে, সব জায়গাতেই বাড়ছে। এই এলাকা অজয় আর ভাগীরথীর মোহনা। অজয়ের ঘোলা জলে মাছ ভালো ডিম পাড়তে পারে। ফলে এখানে মাছের সংখ্যা বেশি হয়।
মাছ বেশি থাকায় ডলফিনের খাবারও বেশি মেলে। সেই কারণে আশপাশের এলাকা থেকে ডলফিন এসে এখানে থাকতে শুরু করেছে। নতুন ডলফিনের জন্মও দিচ্ছে ফলে এই এলাকায় ডলফিনের সংখ্যাটা বাড়ছে।’