নেপালের বদলে ভুটানে আনারস রফতানি চাইছেন উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা
নেপালে নয়। এবার ভুটানে আনারস পাঠাতে চান উত্তরবঙ্গের সংশ্লিষ্ট চাষি ও ব্যবসায়ীরা। করোনা ও লকডাউনের জেরে রফতানি বাণিজ্যে একটানা লোকসান এবং এরই মধ্যে নেপালের সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত টানাপড়েনের জেরে আনারস ব্যবসায়ীরা এরকমই একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন। উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং এবং উত্তর দিনাজপুরের জেলার একাংশের আনারস চাষি ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, লকডাউন শেষে সব স্বাভাবিক হলেও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যও যে দ্রুত স্বাভাবিক হবে, এমনটা আশা করছেন না তাঁরা। তাই আনারস রফতানিতে সরকারি ভাবে বাছা হোক ভুটানকেই।
মাসখানেকেরও আগে এই সমস্যার কথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাকে জানিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আর্জি ছিল, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হোক এবং ভুটানের আনারস পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিক সরকার। রাজু তাঁদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে সাংসদ রবিবার জানান, ক্রেতা হিসাবে ভুটানের একটি সংস্থার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। আরও কিছু সরকারি সংস্থা রয়েছে। তারাও যাতে বিষয়টি দেখে, অনুরোধ করা হয়েছে।
সাংসদকে ব্যবসায়ীরা যখন বিষয়টি জানিয়েছিলেন, তখনও নেপালের সঙ্গে সীমান্ত টানাপড়েনের ঘটনা ঘটেনি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আচমকা সীমান্ত সমস্যা তৈরি হওয়ায় সেদেশে আনারস পাঠানোর কোনও সম্ভাবনাই রইল না। ফলে ভুটানই এখন তাঁদের বিকল্প। তাই ভুটানের জ্যাম-জেলি কারখানায় বেশি পরিমাণে আনারস পাঠানোর সরকারি ছাড়পত্র চাইছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
পাইন অ্যাপেল গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অরুণ মণ্ডল এ দিন বলেন, “করোনায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি। কিন্তু নেপালে কেউ আনারস পাঠাতে চাইছেন না। সীমান্তের গোলমালের আঁচ ব্যবসায় এলে সমস্যা হতে পারে। সকলে ভুটান নিয়ে আগ্রহী।”
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের বিধানগর, পাশের জেলা চোপড়া, সোনাপুর এলাকায় রাজ্যের ৭৫ শতাংশ আনারস উৎপাদন হয়। প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ৬ লক্ষ টন আনারস হয়। জেলা লাগোয়া নেপালে এই অঞ্চল থেকে গত বছরের মরসুম অবধি আনারস গিয়েছে। সেখানে চহিদা থাকলেও ভুটানের সামান্য পরিমাণ যায়। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও পঞ্জাবের আনারাস বিধাননগর থেকেই যায়। কিন্তু লকডাউনে ওই সমস্ত রাজ্য থেকে ট্রাক একেবারেই প্রায় না আসায় বিপাকে আনারস চাষিরা।
আনারস চাষি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নেপালে কমবেশি প্রতিদিন ২৫ হাজার আনারস যেত। চাহিদা মতো খড়িবাড়ি লাগোয়া নেপাল সীমান্তের কাঁকরভিটা দিয়ে আনারস সে দেশে যায়। কিন্তু লকডাউনের পরে সীমান্ত ব্যবসা কমেছে। সরকারি ভাবে সীমান্ত খোলা থাকলেও নেপালে রফতানি প্রায় বন্ধই। সম্প্রতি দু-দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে টানাপোড়েনের আঁচও এসে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা এইসব ঝামেলার মধ্যে আর নেপালে আনারস পাঠাতে চাইছেন না। ব্যবসায়ীরা জানালেন, নেপালের কাঠমান্ডু, বীরতামোড় এলাকায় দু’টি মদের কারখানায় আনারস যেত।
পাইন অ্যাপেল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজল ঘোষ জানান, নেপালের সঙ্গে তাঁরা আর ব্যবসা চাইছেন না। তার পরিবর্তে ভুটানে পাঠানো গেলে ভাল।