অপ্রতুল বাস, বাড়ছে অটো-ট্যাক্সির দৌরাত্ম্য
বাইপাস সার্জারির পর সোমবার হাসপাতাল থেকে স্বামীকে ছাড়ার কথা ছিল। বেসরকারি বাস যে রাস্তায় কম থাকবে, সেটা আশঙ্কা করে একটু আগেই বেরিয়েছিলেন কুদঘাটের কমলা সাঁতরা। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ টালিগঞ্জে আসার পর টানা দেড় ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল তাঁকে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অবশেষে একটা সরকারি বাসে ওঠার সুযোগ পেয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি বাস না থাকলে বেরোনোই বন্ধ হয়ে যেত।’
সোনারপুরের বাসুদেব দাস এসপ্লানেডে দু’টো অফিসে পানীয় জলের ড্রাম পৌঁছানোর কাজ করেন। মাঝের আড়াই মাস অফিস-কাছারি বন্ধ থাকায় এক পয়সাও আয় ছিল না তাঁর। রাস্তায় বাস মেলা অনিশ্চিত বুঝে সোমবার সকালে সাইকেলেই সোনারপুর থেকে এসপ্ল্যানেড রওনা হন তিনি। সোমবার সকালে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বেসরকারি অফিসের কর্মী সুদীপ্তা দত্তকেও। তাঁর কথায়, ‘উপায় নেই। অসুবিধা সত্ত্বেও বেরোতে হবে।’
সোমবার সকাল থেকে গড়িয়া, কামালগাজি, টালিগঞ্জ, রাসবিহারী, এক্সাইড মোড়, ধর্মতলা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, শ্যামবাজার, বরাহনগর–সর্বত্র ছবিটা ছিল মোটামুটি একইরকম। বেসরকারি বাস-মিনিবাস মালিকদের বড় অংশ আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, সরকারি ভর্তুকির টাকা তাঁরা নেবেন না। ভাড়া না-বাড়ালে বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব নয়। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন রাস্তায় বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল আগের সপ্তাহের তুলনায় দৃশ্যতই অনেকটা কম। বৃহত্তর কলকাতায় এ দিন ১০০০-১২০০ এর মতো বেসরকারি বাস নেমেছে বলে সরকারি তরফে দাবি করা হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি তেমনটা ছিল না। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা আঁচ করে রাজ্য পরিবহণ দপ্তরের তরফ থেকে বৃহত্তর কলকাতায় ১১৭০, এসবিএসটিসি-র তিনশো ও এনবিএসটিসি-র ৩৫টি এবং দু’শোর মতো চার্টার্ড বাস নামলেও রাস্তায় বেরনো জনতার ভিড় সামলানোর পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল না। খোদ পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকরাই আঁচ করছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যায় বেসরকারি বাস-মিনিবাস না-নামলে এই দুর্ভোগ চলবেই।
তা হলে এখন উপায় কী? পরিবহণ দপ্তর সূত্রের খবর, ছ’হাজার বাস-মিনিবাসকে মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকির বিজ্ঞপ্তি সোমবার রাত পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। তবে দপ্তরের কর্তারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নরমে-গরমে বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, আপাতত তাঁরা যেন ভর্তুকির টাকা নিয়ে পরিষেবা চালু করেন। আজ, মঙ্গলবার পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বাস-মিনিবাস সংগঠনগুলির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। তবে এ সপ্তাহেই মন্ত্রী বাস মালিকদের সঙ্গে বসবেন বলে জানা গিয়েছে। বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলির তরফে বলা হচ্ছে, এখনও যে কয়েকটি রুটে বেশি ভাড়া নিয়ে বাস চালানো যাচ্ছে, যাত্রীদের তরফে কোনও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না, সেই সব রুটে বাস চলছে। তাতে দৈনিক ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে যাচ্ছে। তবে যে সব রুটে একেবারেই যাত্রী হচ্ছে না, সেগুলি বসে গিয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে বেশ কিছু রুটে বাস-মিনিবাস মালিকরা নিজেদের মতো ভাড়া বাড়িয়ে নিলেও সরকারি তরফে এখন বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তাতে আরও বেসরকারি বাস বন্ধ হয়ে গেলে দুর্ভোগও পাল্লা দিয়ে বাড়বে।
রবিবারই বাসমালিকদের তিনটি সংগঠন জানায়, বাস চালানোর জন্য মালিকদের জোর করা হবে না। কেউ চাইলে বাধাও দেওয়া হবে না। এসবের মধ্যেও রাস্তায় নামা বাসের সংখ্যা ছিল নামমাত্র। যাত্রী সংখ্যার নিরিখে পর্যাপ্ত বাস না থাকায় দিনের শুরু থেকেই ছিল বাদুড়ঝোলা ভিড়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছেন ট্যাক্সিচালক ও অটোরিকশা চালকদের একটা বড় অংশ। গড়িয়া-গোলপার্ক রুটে অটো ভাড়া ১৭ টাকা থেকে একলাফে বেড়ে হয় ২৫ টাকা। ট্যাক্সিচালকরা মিটার বন্ধ রেখে ইচ্ছামতো ভাড়া হাঁকেন। রাসবিহারী থেকে এক্সাইড মোড় যাওয়ার জন্য ২০০ টাকা, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে শ্যামবাজারে ৩০০ টাকা চা ওয়া হয়। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বাড়তে থাকে অনলাইন অ্যাপ ক্যাবের ভাড়াও।