শাঁখা-সিঁদুর না পরা মানে বিয়ে অস্বীকার: গৌহাটি হাইকোর্ট
একটি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের মামলায় সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেছে গৌহাটি হাইকোর্ট! দুই বিচারপতি তাঁদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, স্ত্রী-র এমন আচরণের প্রেক্ষিতে স্বামী ‘ডিভোর্স’ চাইতেই পারেন। এই যুক্তিতেই এই মামলায় স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদের আর্জি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে আদালত। ক’দিন আগেই কর্নাটক হাইকোর্টের একটি পর্যবেক্ষণ ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ধর্ষণে অভিযুক্তকে আগাম জামিন দেওয়ার সময় বিচারপতি মন্তব্য করেছিলেন, ‘ধর্ষণের পর ঘুমিয়ে পড়া ভারতীয় নারীর দস্তুর নয়।’ এমনকী, রাতে হওয়া অপরাধের জন্য ভোরে কেন অভিযোগ জানানো হল, সে প্রশ্নও তুলেছিল আদালত। যার পর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশজুড়ে। এ দিনও গৌহাটি হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন নেটিজেনরা। কেউ জানতে চাইলেন, ‘আমরা কি মধ্যযুগে ফিরে গিয়েছি?’, কেউ আবার বিস্ময়প্রকাশ করে বললেন, ‘আমি তো জানতাম এটা ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।’ কারও প্রশ্নে আবার শ্লেষ, ‘খাপ পঞ্চায়েত নাকি?’
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা পর্যবেক্ষণটি দিন দশেক আগের। ফ্যামিলি কোর্টে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন খারিজ হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন স্বামী। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অজয় লাম্বা এবং বিচারপতি সৌমিত্র শইকিয়ার বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে করেছেন যে নারী, তিনি যদি শাঁখা-সিঁদুর পরতে না চান, তার অর্থ হয় তিনি অবিবাহিত নয়তো এই বিয়েকে স্বীকার করেন না।’ এ প্রসঙ্গে, ওই মহিলার আগের একটি উক্তি উদ্ধৃত করে বিচারপতিরা বলেন, ‘উনি পুলিশের কাছে বলেছিলেন, ওঁকে স্বামী বলে মানি না, তাই শাঁখা-সিঁদুর পরি না।’ আদালতের মনে হয়েছে, ‘এই বৈবাহিক সম্পর্কে থাকতে চান না বলেই মহিলা এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।’ এহেন পরিস্থিতিতে স্বামীর বিচ্ছেদের আর্জি মেনে না নেওয়ার অর্থ তাঁর প্রতি অবিচার করা বলেই মন্তব্য করেছে আদালত। এমনকী, ফ্যামিলি কোর্ট বিষয়টির গভীরতা এবং তাৎপর্য বুঝতে পারেনি বলেও এ দিন উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা।
২০১২ সালে বিয়েটি হয়। সূত্রের খবর, বিয়ের পর যৌথ পরিবারে থাকতে অস্বীকার করেন স্ত্রী। তার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। স্বামী নানা মহলে বলতে শুরু করেন, তাঁর স্ত্রী সন্তানধারণে অক্ষম তাই তাঁদের অশান্তি বেড়ে চলেছে। পরের বছর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন মহিলা।
আদালতে বলেন, ঠিক করে খেতে দেওয়া হত না তাঁকে। এমনকী, অসুস্থ হলে চিকিৎসা না করিয়ে ভাইয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত। মামলাটি হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেলে, বিবাহ বিচ্ছেদের আর্জি নিয়ে ফ্যামিলি কোর্টে যান স্বামী। পাল্টা শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণের জন্য নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন মহিলা। সেই লড়াই-ই এখন হাইকোর্টে, যার শুনানিতে হওয়া পর্যবেক্ষণ ঘিরে বিতর্ক।