জুলাই থেকেই শুরু করোনা-প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়াল
প্রস্তাবিত প্রতিষেধকের সুরক্ষা সংক্রান্ত ট্রায়াল আগেই উতরে গিয়েছিল ল্যাবে। পরের ধাপের জন্য জরুরি মানবশরীরে তার কার্যকারিতার ট্রায়াল। ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার (ডিসিজিআই) তরফে সে অনুমতিও মিলেছিল সোমবার। প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘ভারত বায়োটেক’ মঙ্গলবার জানিয়ে দিল, জুলাই থেকেই তাদের তৈরি করোনা-প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হবে। ‘কোভ্যাক্সিন’ নামে ওই সম্ভাব্য প্রতিষেধকের হাত ধরেই ছাড়পত্র পেল সম্পূর্ণ ভাবে দেশে তৈরি কোনও করোনা-ভ্যাকসিনের প্রথম হিউম্যান ট্রায়াল। এই গবেষণায় ভারত বায়োটেককে প্রভূত সহযোগিতা করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং তার অধীন সংস্থা পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি)।
বেসরকারি সংস্থাটির তরফে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘এনআইভি-পুনের গবেষণাগারে সার্স-কোভ-২ বা নভেল করোনাভাইরাসের যে স্ট্রেনটি এ দেশে হামলা চালিয়েছে, সেই প্রজাতিটিকেই আলাদা করে পাঠানো হয়েছিল আমাদের ল্যাবে। তার পর, হায়দরাবাদের জিনোম ভ্যালিতে সংস্থার বায়োসেফটি-৩ স্তরের অতি সুরক্ষিত গবেষণাগারে প্রতিষেধকটি তৈরি করা হয়।’ ওই সংস্থার দাবি, প্রাক-ক্লিনিক্যাল পর্যায়ের গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল তারা ডিসিজিআইয়ের দপ্তরে জমা করে মানবশরীরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়েছিল। সব নথি খতিয়ে দেখে ডিসিজিআই পরের দফার ট্রায়ালের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে।
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, তিন দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যদি সাফল্য মেলে কোভ্যাক্সিনের, তা নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য সুখবর হবে। কেননা, তা দাম ও কার্যকারিতার নিরিখে হয়তো এগিয়ে থাকবে বিদেশি প্রতিষেধকের চেয়ে। ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বপনকুমার জানার মতে, বিদেশি সংস্থার আমদানি করা ভ্যাকসিনের চেয়ে সম্পূর্ণ ভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ভ্যাকসিনের দাম যে কম হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত। মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ আশিস মান্নার বক্তব্য, ‘বিভিন্ন দেশে করোনার বিভিন্ন প্রজাতি বা স্ট্রেন দাপাদাপি করেছে। কোভ্যাক্সিন তৈরিতে যেহেতু করোনার ভারতীয় স্ট্রেনটি ব্যবহার করা হয়েছে, তাই অন্য যে কোনও দেশে তৈরি ভ্যাকসিনের চেয়ে এ দেশে ভারতীয় ভ্যাকসিনই বেশি কার্যকর হবে।’ তবে সবই নির্ভর করছে আগামী দিনে প্রস্তাবিত এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সাফল্যের উপরে।
এ দিনই করোনা প্রতিষেধক তৈরির অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এহেন জাতীয় উদ্যোগের দিশা নির্ধারণ করতে চারটি নীতির কথাও জানান তিনি। প্রথমত, প্রতিষেধক তৈরি হলে সকলের আগে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো যাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, তাঁদেরই সর্বাগ্রে তা দেওয়া হবে। এর পরেই, প্রতিষেধকটি যেন ‘সকলে, সর্বত্র’ পেতে পারেন, দাম যেন সকলের আয়ত্তের মধ্যে হয় এবং তা তৈরি থেকে শুরু করে মানবদেহে ঢোকা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি যেন নজরবন্দি থাকে, সে নির্দেশও দেন তিনি।
উল্লেখ্য, চিনা সেনার গবেষণা সংক্রান্ত বিভাগ ও ‘ক্যানসিনো বায়োলজিকস’-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘অ্যাড৫-এনকোভ’ শীর্ষক প্রতিষেধকটি সম্প্রতি সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যবহারে ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে এখনও বৃহত্তর জনতার মধ্যে এটি ব্যবহারে অনুমতি নেই বলে জানিয়েছে ক্যানসিনো-ই।