দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

পুনরুজ্জীবনের আশায় দিন গুনছে খিদিরপুর ডক

July 2, 2020 | 2 min read

দিল্লির বঞ্চনা নিয়ে দশকের পর দশকের অভিযোগের ট্র্যাডিশনে সামান্য হলেও সুখবর কলকাতা তথা বাংলার জন্য। আচমকা পুনরুজ্জীবনের আশা জেগেছে খিদিরপুর ডকের। সূত্রের খবর, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা, বর্তমানে ‘মৃতপ্রায়’ এই ডক চাঙ্গা করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রক। ডকের খোলনলচে বদলে ফেলা হবে। জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য বসবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। নাব্যতা-সমস্যা মোকাবিলারও পরিকল্পনা হয়েছে। সব মিলিয়ে কলকাতা বন্দরের পণ্য পরিবহণ ক্ষমতা বাড়বে অনেকটাই।

বন্দরের কর্তারা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় এই ডক এখন অনেকাংশেই রুগ্‌ণ। তবে এখানে অনেক আগে থেকেই পর্যাপ্ত বার্থ এবং শেড রয়েছে। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পণ্য খালাসের পরিমাণ তলানিতে ঠেকেছে। মন্ত্রক এখন এই ডকের পুনরুজ্জীবন ঘটাতে চাইছে। কলকাতা বন্দরের জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ‘এই সময়’কে জানান, দু’টি ধাপে আধুনিকীকরণ করা হবে। পিপিপি মডেলে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে মিলে প্রকল্প রূপায়ণ করবে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট। এই কাজের জন্য সংস্থা বাছাইয়ে কয়েক দিন আগেই টেন্ডার ডাকা হয়েছে। নকশা তৈরি, অর্থ জোগাড়, ডক সংস্কার এবং পরিচালনা–সমস্তটাই ওই বেসরকারি সংস্থা করবে। ৩০ বছরের জন্য তারাই দেখভাল করবে। এই প্রকল্পে খরচ হবে মোট ১৮৫ কোটি টাকা।

খিদিরপুর ডক

বন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে অবহেলিত এই ডকটির পশ্চিম দিকে দু’টি কন্টেনার বার্থ এবং একটি মাল্টি পারপাস (বিভিন্ন ধরনের পণ্য খালাস হয়) বার্থের সংস্কার করা হবে। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ মিটার। এখানে মোট ৬.৭৭ হেক্টর জমিও রয়েছে। পণ্য খালাসের জন্য বিশেষ সুবিধাযুক্ত দু’টি মোবাইল হারবার ক্রেন ও অন্যান্য দরকারি সরঞ্জাম কেনা হবে। ফলে বছরে প্রায় ২৫ লক্ষ টন পণ্য খালাস হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনটি বার্থের আধুনিকীকরণ করা হবে। এর দৈর্ঘ্যও ৪০০ মিটার। সংস্কারের কাজ শেষ হলে বছরে পণ্য খালাস হবে প্রায় ১৫ লক্ষ টন। এখন হয় সাকুল্যে ২ লক্ষ টন।

এক সময় দেশের সব থেকে আধুনিক ডক ছিল এটিই। ১৮৯২ সালে চালু হয় ভাগীরথী নদীর খাঁড়িতে। ডক তৈরির আগে কলকাতা বন্দরে হুগলি নদীর উপর জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হত। তাতে অনেক সমস্যা ছিল। খিদিরপুর ডক নির্মাণের ফলে কলকাতা বন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তী কালে হুগলি নদীর নাব্যতা কমার সঙ্গে সঙ্গে খিদিরপুর ডকও তার কার্যকারিতা হারাতে আরম্ভ করে। বর্তমানে এখানে গম, চাল-সহ বিভিন্ন খাদ্যশস্য, কাঠের গুঁড়ি, রাসায়নিক, সার ইত্যাদির কন্টেনার জাহাজ থেকে নামানো হয়। হলদিয়া বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে এসে বার্জগুলিও খিদিরপুর ডকে নামায়। এখানে মোট ১৮টি বার্থ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মাল্টি পারপাস এবং প্যাসেঞ্জার কাম কার্গো ভেসেল বার্থ। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় ডকের পূর্ণ সদ্ব্যবহার হচ্ছিল না। এতদিন হেলদোল না হলেও ভারত-চিন সীমান্তের পরিস্থিতিই দিল্লিকে নতুন করে ভাবাচ্ছে বলে ব্যাখ্যা কোনও কোনও মহলের। পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতের কৌশলগত অবস্থান থেকে এই ডক সীমান্ত বিবাদের পরিস্থিতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নাব্যতা সমস্যার মোকাবিলা যে বড় চ্যালেঞ্জ, সেটাও মনে করাচ্ছেন জাহাজি মহল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Khidirpur

আরো দেখুন