বীরেশ্বর বিবেকানন্দের বিষয়ে জানতেন এসব কথা?
ভারতের হিন্দু নবজাগরণের পথিকৃত তিনি। রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনিই ভারত সহ বিভিন্ন দেশের মানুষের চিন্তাশক্তি বদলে দিয়েছেন। মানবজাতির উন্নতিসাধনের সব ধরনের চেষ্টা করেছেন।
জেনে নিন স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য:
১. যার কথা বলার ধরন বা বাকপটুতাকে ইংল্যান্ড, আমেরিকার মত দেশ ভয় পেত। তিনি ৫৬% নম্বর পেয়ে আর্টসে স্নাতক পাশ করেন। স্নাতকোত্তরের এন্ট্রান্সে পেয়েছিলেন মাত্র ৪৭% নম্বর।
২. বাবার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারে অর্থসংকট দেখা দেয়। তখন অধিকাংশ দিনই দুপুরে নেমন্তন্ন আছে বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতেন। বাড়ির সবাই সেদিন একটু পেট ভরে খেতে পেত সেদিন। নরেনের তখন কোনোদিন খাবার জুটতো আবার কোনওদিন উপোস করতেন।
৩. তাঁর দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে বহু ধনী মহিলা প্রেম নিবেদন করতেন। তাঁর সঙ্গে থাকতে চাইতেন। কিন্তু স্বামীজির ধনুক ভাঙা পণ, ক্ষনিকের মোহের থেকে ক্ষুধার্ত থাকাও ভালো।
৪. স্নাতকের পর চাকরির জন্য বিবেকানন্দ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। সেই মুহূর্তে তাঁর ভগবানের উপর বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলতেন, ‘আমি বেকার।’ চিৎকার করে বলতেন, ‘ভগবান নেই’।
৫. কাকা তারকনাথের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দের কাকিমা জ্ঞানদাসুন্দরী তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ১৪ বছর ধরে বিবেকানন্দ মামলা লড়ে গিয়েছেন। কাকিমার ভরনপোষণের জন্য কিছু টাকা দিয়ে সেই মামলার নিষ্পত্তি করিয়ে মহাপ্রয়াণে যান স্বামীজি।
৬. তাঁর বোন যোগেন্দ্রবালা আত্মহত্যা করেন। একদিন বিবেকানন্দ জোগেন মহারাজকে বলেছিলেন, “জানেন কি? দত্তরা কেন চিন্তা ভাবনায় এত প্রভাবশালী হয়? কারন আমাদের পরিবারে অনেক আত্মহত্যার ইতিহাস রয়েছে। আমরা অদ্ভূত স্বভাবের। কোনো কাজ করার আগে ভাবি না। ফলাফলের চিন্তা না করেই খুব সহজভাবেই যা ইচ্ছা হয় তাই করে ফেলি।
৭. বিবেকানন্দ তাঁর মায়ের পরম ভক্ত ছিলেন। মাকে পুজো করতেন তিনি। তিনি একবার বলেছিলেন, “কে আমার বিষয়ে কি বলল তাতে আমার কিছু আসে যায় না। এমন কি শুধু একজন বাদে আমার পরিবারের লোক আমায় নিয়ে কি বলল তাতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি আমার বৃদ্ধা মা।”
৮. কোনো মহিলারই তাঁর মঠে ঢোকার অনুমতি ছিল না। এমনকি তাঁর মায়েরও সেখানে ঢোকা নিষেধ ছিল। একবার তাঁর খুব জ্বর হয়েছিল। তখন তাঁর মা মঠে প্রবেশ করেছি্লেন। বিবেকানন্দ চিৎকার করে বলেছিলেন, “কোনো মহিলাকে কেন ঘরের মধ্যে ঢুকতে দিয়েছ তোমরা। আমি নিয়ম বানিয়েছি, সেই নিয়ম আজ আমি ভেঙে ফেললাম।”
৯. সেই সময় হিন্দু পণ্ডিতেরা চা পানের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু বিবেকানন্দ ছিলেন চায়ে আসক্ত। তিনিই মঠে চা পানের প্রচলন করেন।
১০. শেষ জীবনে বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের বলে গিয়েছেন, “আমার অভিজ্ঞতা থেকে তোমরা শিক্ষা নাও। কখনও নিজের শরীরকে এতটাও কষ্ট দিও না। যার প্রভাব তোমার স্বাস্থ্যের উপর পড়বে। আমি নিজের জীবনের সব থেকে সুন্দর বছরগুলি এইভাবে নষ্ট করেছি। তারই এখন ভুক্তভোগী।”