রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রেলের অনৈতিক ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নির্দেশ মমতার

July 4, 2020 | 2 min read

কর্মী ছাঁটাই করছে না রেল। তবে, কিছু পদের এক্তিয়ার এবং সুযোগ সুবিধায় (প্রোফাইল) বদল হতে পারে। শুক্রবার অনলাইন ব্রিফিং-এ এমনই জানিয়েছেন রেলবোর্ডের ডিরেক্টর জেনারেল (এইচআর) আনন্দ খাটি।

বৃহস্পতিবার রেলের তরফে জারি করা এক নির্দেশ ঘিরে এই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি কর্মী ছাঁটাই এবং নিয়োগ বন্ধের পথে হাঁটছে রেল? এ দিন সংস্থার তরফে দাবি করা হল, ‘নন-ফাংশনাল এবং নন-সেফটি পদগুলি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে, যাতে রেলের নতুন প্রকল্পগুলির জন্য সেফটি পদ তৈরি করা যায়।’ রেল-কর্তা জানিয়েছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া যেমন চলছে, তেমনই চলবে। তবে, একই সঙ্গে তিনি এও বলেন যে, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কম দক্ষতা থেকে বেশি দক্ষতার দিকে ঝুঁকবে রেল। এই বক্তব্যের অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

এ দিকে, যাত্রিবাহী ট্রেন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক-প্রতিবাদ অব্যাহত। এ দিন কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় দলকে পথে নেমে প্রতিবাদ করতে নির্দেশ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দলের নেতাদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে এই নির্দেশ দেন তিনি। বেসরকারি-ট্রেন চালানোর জন্য বাংলার ১৫টি রুটকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার ফেয়ারলি প্লেস, শিয়ালদহ, মালদহ, হাওড়া, লিলুয়া, কাঁচড়াপাড়া সহ রেলের বিভিন্ন ডিভিশনাল অফিস এবং ওয়ার্কশপের সামনে পূর্ব রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের তরফে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সব জায়গাতেই কর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। পূর্ব রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সম্পাদক অমিত কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, যে কোনও মূল্যেই হোক তাঁরা রেলের বেসরকারিকরণ আটকাবেন। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে কোনও বেসরকারি ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চালক ও গার্ডরা।

এ দিকে, রেলের আরও একটি সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশের ৬৫০টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেস ট্রেনে বদলে ফেলা হবে। এর জেরে যাত্রীভাড়া বাড়বে অনেকটাই। বেশ কিছু স্টেশনেও দাঁড়াবে না ট্রেন। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইতিমধ্যে রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রেল স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া। এই বিষয়ে তিনি রেলের দু’টি বৃহৎ সংগঠন ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ও অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে ফেডারেশনের সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রবীণ এক রাজনীতিবিদের কথায় , ‘গত ১৭ জুন রেল পর্ষদ থেকে বিভিন্ন জোনাল ম্যানেজার এবং চিফ প্যাসেঞ্জার ট্র্যাফিক ম্যানেজারকে জানানো হয়, তাঁদের এলাকায় কোন কোন প্যাসেঞ্জার ট্রেন তুলে দিয়ে এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করা যাবে তার তালিকা অবিলম্বে পাঠান। সারা দেশে এমন প্রায় ৬৫০টি প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে ওরা তুলে দিতে চায়। আসলে রাজধানী, শতাব্দী, দুরন্ত থেকে রেল যে আয় করে, এইসব যাত্রী ট্রেন থেকে সেই আয় হয় না। কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রেল এতদিন এই ট্রেনগুলো চালিয়ে এসেছে।’ ১৯ জুন বিভিন্ন জোনের জোনাল ম্যানেজাররা এর জবাবও পাঠিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘২০০ কিলোমিটারের বেশি যাতায়াতকারী যে সব প্যাসেঞ্জার ট্রেন আছে, সেগুলো এক্সপ্রেস ট্রেনে বদলে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হবে। এক্সপ্রেস হওয়ার কারণে কমিয়ে দেওয়া হবে স্টপেজের সংখ্যাও। তার মধ্যে থাকতে পারে খড়্গপুর-হাতিয়া প্যাসেঞ্জার, হাওড়া-শিরোমনি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, চক্রধরপুর-বোকারো স্টিল সিটি প্যাসেঞ্জারের মতো ট্রেন।’

এই প্রসঙ্গে ইস্টার্ন রেল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘আমরা পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদা, আসানসোল, মালদা এই চার ডিভিশনে যাত্রী ট্রেনের বেসরকারিকরণ এবং প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেসে রূপান্তরিত করার প্রতিবাদে আন্দোলন করছি।’ ভারতীয় রেল মজদুর সঙ্ঘের কার্যনির্বাহী সদস্য আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেসে উন্নীত করার নামে যাত্রীদের সঙ্কটে ফেলার বিরুদ্ধে আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই প্রতিবাদ আন্দোলনে নামব।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #workers, #Indian Railway

আরো দেখুন