বেড়েই চলছে সংক্রমণ, ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে রেকর্ড ৭৪৩ করোনা আক্রান্ত
উদ্বেগ বাড়িয়ে রাজ্যে দ্রুত হারে বাড়ছে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৭৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ যাবৎ যা সর্বোচ্চ। আক্রান্তদের শীর্ষে সেই কলকাতা। গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু মহানগরেই ২৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। পরিস্থিতি বিচার করে কলকাতার ১৮টি কনটেনমেন্ট এলাকায় কড়া লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। শনিবার পুর-প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘কলকাতার ১৮টি জায়গায় গত দু’সপ্তাহে সর্বাধিক কেস হয়েছে। আমরা সেখানে আরও কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে বলেছি পুলিশকে।’
জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই বাড়ছিল আক্রান্তের সংখ্যা। জুলাইয়ের গোড়া থেকে প্রতি দিনই আক্রান্তের সংখ্যা ছাপিয়ে যেতে শুরু করে আগের সংখ্যাকে। কয়েক সপ্তাহ আগেও নমুনা পরীক্ষার নিরিখে পজিটিভ আসার হার ছিল ৩ শতাংশের আশেপাশে। জুলাইয়ের গোড়ায় তা ৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় যা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে ৬ শতাংশের বেশি পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের কাছাকাছি উপসর্গহীন। অধিকাংশেরই হাসপাতালের বহির্বিভাগের মাধ্যমে টেস্ট হয়েছে। রাজ্যে বর্তমান যা ট্রেন্ড, তাতে আগামী কয়েক সপ্তাহ কঠিন হতে চলেছে। আক্রান্তের নিরিখে আমাদের গ্রাফ এখন শিখরে উঠছে।’
শনিবার ঝাড়গ্রাম এবং কোচবিহার বাদে রাজ্যের সব জেলা থেকেই আক্রান্তের খোঁজ মিললেও সবচেয়ে চিন্তায় রাখছে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি আর হাওড়া। কারণ, মোট আক্রান্তের ৮০ শতাংশই এই পাঁচ জেলার বাসিন্দা। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৯ জনের মধ্যে ১৪ জনও এই পাঁচ জেলার মধ্যে তিনটির (কলকাতা-৮, উত্তর ২৪ পরগণা-৩, হাওড়া-৩) বাসিন্দা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তারও মৃত্যু হয়েছে। এই হেন পরিস্থিতিতে পাঁচ জেলায় বাড়তি নজরদারির কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ইতিমধ্যেই কড়া লকডাউনের পাশাপাশি মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় হোম কোয়ারান্টিন এবং করোনা পজিটিভ হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের উপর বাড়তি নজরদারি এবং তাঁদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার কথা পুরসভাকে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এই প্রেক্ষিতেই হোম আইসোলেশন এবং কোয়ারান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের বাড়িতে করোনা-বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা করে হলুদ প্যাকেট পাঠিয়েছে পুরসভা। প্রতিদিন নিয়ম করে দু’বার টেলিফোনে প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগও রাখা হচ্ছে বলে পুরকর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। শহরের বিভিন্ন বাজারও চিন্তায় রাখছে পুরকর্তাদের। অধিকাংশ বাজারেই ঠিকমতো দূরত্ববিধি মানা হচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেশ কিছু মাছ ব্যবসায়ী পজিটিভ হওয়ায় বন্ধ করা হয়েছে বাঘাযতীন বাজার।
বৃহস্পতিবার রাতে করোনা পজিটিভ হয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই কর্মীও। যার জেরে স্বাস্থ্যসাথী বিভাগের বড় অংশের কর্মী এবং বেশ কয়েক জন কর্তাকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রিসার্চ বিভাগের এক কর্মীর জ্বর সারার পর বিভাগেরই আর এক কর্মীর জ্বর আসায় গবেষণা দপ্তর স্যানিটাইজেশনের জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে। দিন পনেরো আগে রিসার্চ বিভাগের এক কর্মীর জ্বর-সর্দি হওয়ার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে মানা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। ওই কর্মী সেরে উঠলেও তাঁর বাবা করোনা পজিটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন হাসপাতালে। এর পর দু’দিন আগে আর এক কর্মীর জ্বর আসায় বিভাগ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।