কোভাক্সিনে তৈরিতে তাড়া দিতেই সময়সীমা, সাফাই কেন্দ্রীয় সংস্থার
করোনা প্রতিষেধক তৈরিতে তাড়া দিয়ে প্রথমে বিতর্কিত চিঠি, তার পর তার সাফাই দিতে মাঠে নামল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। কেন্দ্রীয় এই সংস্থার দাবি, লাল ফিতের ফাঁস কাটিয়ে প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়া দ্রুত করতেই নির্মাতা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়ে তাড়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই তাড়া দেওয়ার সময়সীমা হিসেবে কেন ১৫ অগস্ট অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসকেই বাছা হল, তার কোনও ব্যাখ্যা বিবৃতিতে নেই। ফলে, স্বাধীনতা দিবসে ভ্যাকসিন এনে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছেন বলে যে অভিযোগ উঠছে, তার কোনও জবাব আইসিএমআরের বিবৃতিতে মেলেনি। এইমসের অধিকর্তা তথা কেন্দ্রের চিকিৎসা বিষয়ক উপদেষ্টা রণদীপ গুলেরিয়াও যেখানে মনে করেন, প্রতিষেধক তৈরির এই সময়সীমা অবাস্তবোচিত, সেখানে কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থার প্রধান কেন এমন সময়সীমা ধার্য করলেন, মেলেনি তার জবাব। আইসিএমআরের শুধু বক্তব্য, তারা মানুষের নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, সেই সঙ্গে ভারতের মেডিক্যাল প্রফেশনাল এবং গবেষকদের পেশাদারিত্ব নিয়েও সন্দেহের অবকাশ নেই।
২ জুলাইয়ের যে চিঠি ঘিরে বিতর্ক, কী ছিল তাতে?
করোনার দেশীয় প্রতিষেধক ‘কোভ্যাক্সিন’ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘ভারত বায়োটেক’কে লেখা চিঠিতে আইসিএমআরের মহানির্দেশক বলরাম ভার্গব জানিয়েছিলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্ব দ্রুত মিটিয়ে করোনা-ভ্যাকসিনকে ১৫ অগস্টের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে কেন্দ্র। শুধু ভারত বায়োটেককে নয়, যে ১২টি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলবে সেখানেও আইসিএমআর চিঠি লিখে জানায়, ৭ জুলাইয়ের মধ্যে ট্রায়াল ভলান্টিয়ার নিয়োগের কাজ শুরু করতে হবে। অথচ, মানবশরীরে কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি মিলেছে সবে সোমবার! ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম পর্যায় মাস খানেকের মধ্যে মিটলেও দ্বিতীয় পর্যায় মাস দশেকের আগে মেটা সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন না তো? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রশ্ন তোলেন, প্রতিষেধকের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা ডিসিজিআই পরীক্ষা করার আগেই আইসিএমআর কী ভাবে তা বাজারে আনার দিন ঘোষণা করতে পারে? এই সব প্রশ্নের মুখে আইসিএমআরের জবাব, ‘আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়াকে ফাস্ট-ট্র্যাক করতে চেয়েছে আইসিএমআর। অনাবশ্যক লাল ফিতের ফাঁসে দেশীয় টেস্টিং কিটের অনুমোদন বা কোভিড-১৯-এর সম্ভাব্য ওষুধ বাজারে আসার প্রক্রিয়া আটকে গিয়েছে। বাধা এড়িয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দ্রুত সম্পন্ন করতেই এই সময়সীমা।’