তৃণমূলের উত্থানের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রামে দুর্নীতি, শোকজ ২০০ নেতাকে
নন্দীগ্রাম! এই একটা নামই যথেষ্ট পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের ইতি ও তৃণমূলের রাজত্ব শুরুর প্রেক্ষাপট বোঝাতে। সিঙ্গুরের পাশাপাশি এই নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনই তৃণমূল নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী করে তুলেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই নন্দীগ্রাম তাঁর কাছেও অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। রাজনৈতিক নিয়মেই রাজ্যে জাঁকিয়ে বসেছে বিজেপি। এমনকী ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদলের দাবি করছে তাঁরা। গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মতো তৃণমূলের নিচু তলায় নিত্যদিন উঠছে দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু দলে যে দুর্নীতিকে কোনও প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তা আগাগোড়াই বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে দলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার তাই নজিরবিহীন পদক্ষেপ করলেন তিনি।
তৃণমূল সূত্রে খবর, শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকাতেই একসঙ্গে ২০০ জন নেতাকে শোকজ করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। লকডাউন পর্বে রেশন নিয়ে নানা জায়গায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছিলই। সেইসঙ্গে জুটেছে ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের ত্রাণ নিয়েও দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে নন্দীগ্রামেও উঠেছে একই অভিযোগ।
বিশেষত নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের সামসাবাদ, ভেকুটিয়া ও কেন্দামারি জলপাই পঞ্চায়েতের দলীয় প্রধানদের শোকজ করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান হয়েও এই তৃণমূলনেতারা তাঁদের পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলেছেন। গত ২৯ জুন জেলা প্রশাসনের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশের পরই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে বলে অভিযোগ। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সাফ জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ছাড় পাবেন না কেউ।
সম্প্রতি দলের নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও তৃণমূল নেত্রী সাফ বলে দিয়েছেন, দুর্নীতি যারা করছে আর যারা অভিযুক্তদের আড়াল করছে, সকলেরই সাজা হবে। এমনকী ত্রাণ-দুর্নীতির প্রশ্নে দল থেকে আরও কিছু নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা দল থেকে বহিষ্কারও হয়েছেন। শুধু দলীয় পদক্ষেপই নয়, দুর্নীতিতে দোষ প্রমাণিত হলে প্রশাসনিকভাবেই যে তাঁদের ছাড়া হবে না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিধানসভা ভোটের দৌড় শুরু করার আগে দলের অন্দরে মমতার এহেন শুদ্ধকরণ বার্তা রাজ্যবাসীর কাছেও স্বস্তির বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, মমতা তাঁর দলকে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্ণধার হিসেবে রাজধর্ম পালনের ক্ষেত্রে দল দেখবেন না তিনি। গত ২৪ জুন নবান্নের সর্বদল বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ত্রাণে দলবাজির কোনও জায়গা নেই। কাউকে ছাড়া হবে না।’ সেটা যে নেহাত কথার কথা নয়, নন্দীগ্রামে একসঙ্গে ২০০ নেতাকে শোকজ থেকেই তা স্পষ্ট।