মানবদেহে কোভ্যাকসিন ট্রায়ালে বাংলার চিরঞ্জিত ধীবর
সমালোচনার ধাক্কা সামলেই মানবদেহে ‘কোভ্যাকসিন’-এর পরীক্ষা চালু করতে চলেছে আইসিএমআর। আগামী ১৩ জুলাই। সব কিছু ঠিক থাকলে মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে করোনা-জব্দে ভারতের প্রথম টিকা। গোটা দেশে তৈরি ১ হাজার ১২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। বাংলা থেকে সেই দলে নাম লিখিয়েছেন দুর্গাপুরের প্রাথমিক শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর। সাফল্য মিললে তো কথাই নেই! ইতিহাস গড়বে ভারত। তবে স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় সেই ইতিহাস লেখা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, বিজ্ঞান-সাধনায় সরকারের তাড়াহুড়োকে ভালো চোখে দেখছিলেন না বিশেষজ্ঞরা। শুরু হয় তীব্র সমালোচনা, বিতর্ক। চাপে পড়ে সুর নরম করে আইসিএমআর। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের নির্ঘণ্ট ৭ জুলাই থেকে পিছিয়ে দেয় তারা। ফলে আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল মোদি সরকারের হাতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গবেষকরা।
কীভাবে চলবে এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল? কীভাবেই বা প্রয়োগ করা হবে স্বেচ্ছাসেবকদের দেহে? আইসিএমআর এবং ভারত বায়োটেকের তৈরি ‘কোভ্যাকসিন’ প্রথম পর্যায়ে ৩৭৫ জন (১৮-৫৫ বছর) স্বেচ্ছাসেবকের দেহে প্রয়োগ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকছেন ৭৫০ (১২-৬৫ বছর) জন। মূলত কোভিড-১৯ ভাইরাসের অ্যান্টিজেনই দু’বার প্রয়োগ করা হবে তাঁদের দেহে। প্রথমবার প্রয়োগের পর দু’সপ্তাহ অপেক্ষা। তারপর ফের প্রয়োগ। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায় ৬০ জনেরই বেশি বাঙালি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আবেদন করেছিলেন। নীতিগতভাবে নির্বাচিতদের সরকারিভাবে নাম জানানো হয় না। তবে স্বেচ্ছাসেবকের আপত্তি না থাকলে সমস্যা নেই। তিনি নাম প্রকাশ্যে আনতেই পারেন। দুর্গাপুরের বছর তিরিশের ওই শিক্ষক যেমন নিজেকে আড়ালে রাখেননি।
শনিবার আইসিএমআর এর পক্ষ থেকে চিরঞ্জিতবাবুর কাছে ফোন আসে। তাঁকে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়। আগামী সপ্তাহে ওড়িশার জাজপুর ‘ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড এসইউএম হসপিটাল’-এ চিরঞ্জিতবাবুর দেহে প্রয়োগ করা হবে ‘কোভ্যাকসিন’। দুর্গাপুরের শিবাজি রোডের বাসিন্দা চিরঞ্জিতবাবুকে নিজ উদ্যোগেই ওড়িশা যেতে হবে। সেখানে থাকতেও হবে কিছুদিন। ছ’টি পর্যায়ে পরীক্ষা চলবে। সম্পূর্ণ নীরোগ মানবদেহে এই পরীক্ষা চলবে ১৯৪ দিন। মঙ্গলবার চিরঞ্জিতবাবু বলেন, ‘সরকার যাতায়াতের ব্যবস্থা না করলেও আমি বাইক চালিয়ে জাজপুর চলে যাব। পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই। আমি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ তৈরি।’ ভুবনেশ্বর কেন্দ্র থেকেও চিরঞ্জিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মঙ্গলবার চিকিৎসকরা তাঁর দেহে পরীক্ষার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন।
ওড়িশার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ডাঃ ভেঙ্কট রাও এদিন বলেছেন, ‘স্বেচ্ছাসেবকদের থাকা সহ পরীক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা ফাইনাল হলে ‘কোভ্যাকসিন’-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করব। আশা করি আগামী সপ্তাহে তা শুরু করতে পারব।’ নয়াদিল্লির এইমসসহ মোট ১২টি প্রতিষ্ঠানকে মানবদেহে করোনার দেশীয় ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য ঠিক করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের এথিক্স কমিটি এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সজাগ দৃষ্টি রাখবে। ইতিমধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে কমিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেগুলির অনুমোদনও মিলেছে। ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস রেজিস্ট্রি, ইন্ডিয়া’ বা সিটিআরআইয়ের তরফেও এদিন বলা হয়েছে, আগামী ১৩ জুলাই ‘কোভ্যাকসিন’-এর প্রথম ট্রায়াল শুরু হবে।
চিরঞ্জিতবাবু কাঁকসা ব্লকে মানিকারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ‘কোভ্যাকসিন’-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য প্রথমে দুর্গাপুরের মহকুমা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রশাসনের পরামর্শেই তিনি ২৭ এপ্রিল আইসিএমআরের কাছে আবেদন করেন।