দুর্নীতির দায়ে ২৫ জন তৃণমূল নেতা সাসপেন্ড নন্দীগ্রামে
দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগে নন্দীগ্রামের এক পঞ্চায়েত প্রধান-সহ ২৫ জন স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ড করল শাসকদল। জেলা জুড়ে আম্পানের ক্ষতিপূরণ বিলিতে নন্দীগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকার বেশ কিছু স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কয়েক দিন আগে শুধু নন্দীগ্রামেরই ২০০ তৃণমূল নেতা-কর্মীকে শো-কজ নোটিস ধরানো হয়েছিল। সোমবার সমস্ত শো-কজের উত্তর আসার পর নন্দীগ্রামের ১ পঞ্চায়েত প্রধান এবং ২৫ জন স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে দল থেকে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার সকালে নন্দীগ্রামে ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে জেলা কোর কমিটির বৈঠকের পর দুপুরে এই সাসপেনশনের কথা ঘোষণা করেন নন্দীগ্রাম ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল। তিনি বলেন, ‘এই ২৫ জনের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পরিবর্তে অনিয়ম ও স্বজনপোষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
২৫ জনের মধ্যে একজন কেন্দামারি অঞ্চলের গ্রাম প্রধান মানসুরা বেগম, দু’জন অঞ্চল সভাপতি কেন্দামারির বনবিহারী দাস ও ভেকুটিয়া অঞ্চলের পঙ্কজ দাস, ১০ জন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, ২ জন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও বাকিরা বুথ সভাপতি ও অঞ্চল নেতৃত্ব রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে।
যদিও এখনও পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী অবশ্য বলেছেন, ‘দল কারও কোনও অন্যায় বরদাস্ত করবে না। ২৫ জনের মধ্যে ৫ জনকে পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে। জেলা জুড়েই ক্ষতিপূরণ বিলিতে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত প্রশাসনিক ভাবে ও দলীয় ভাবে শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। কোনও অবস্থায় অন্যায়ের সঙ্গে আপস করবে না দল। অন্যায় প্রমাণিত হলে আইনের রাস্তায় শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য অভিযোগ, ‘ক্ষতিপূরণের অর্থ নিয়ে নন্দীগ্রামে দুর্নীতি হয়েছে। যে দুর্নীতি হয়েছে, তা তৃণমূল পার্টি, রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী সকলে জানে। বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে দলের কিছু লোক দুর্নীতি করেছে, বাকিরা সবাই ঠিক আছে।’ পাশাপাশি, ওই শো-কজ নোটিস ধরানোর পরেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল নেতারা ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন। মেঘনাদ বলেন, ‘নন্দীগ্রাম এলাকায় এখন পর্যন্ত ৮৭ জন টাকা ফেরত দিয়েছেন, আরও ৫০ জন টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সাসপেন্ড হওয়া সকলে যে নিজেরা টাকা নিয়েছেন, এমন নয়। এদের কেউ আত্মীয়স্বজন পরিচিতদের ক্ষতিগ্রস্ত না-হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দিয়েছেন। আবার কেউ অন্য ভাবে কাউকে অবৈধ সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। তাই দল অভিযোগের তদন্ত করার পর সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
দলীয় সূত্রে খবর, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি ময়না ও মহিষাদলেরও কয়েকজন তৃণমূল নেতা টাকা ফেরত দিয়েছেন। ব্লক সভাপতির অভিযোগ, ‘নন্দীগ্রাম নিয়ে কিছু সংবাদমাধ্যম ভুল তথ্য প্রচার করছে। এটা এখনও তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তাড়াহুড়ো করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু মানুষ বাদ পড়েছেন। তাই যাঁরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই নিয়ে স্থানীয় কিছু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল। দল বা স্থানীয় বিধায়ক ও দলের নেত্রীর উপর কোন ক্ষোভ নেই। এখনই নির্বাচন হলে নন্দীগ্রামে তৃণমূল আবার জিতবে।’