ভারতের কিছু কুখ্যাত এনকাউন্টার
এনকাউন্টার শব্দটির সঙ্গে কমবেশী আমরা সকলেই পরিচিত। সম্প্রতি বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের সঙ্গে সঙ্গে শব্দটি আবার চর্চায় এসেছে। কিন্তু তার সঙ্গেই জুড়ে গেছে আরেকটি শব্দ ফেক।
এনকাউন্টার শব্দের অর্থ হঠাৎ অপ্র্যাতাশিত ভাবে আঘাত পেয়ে আত্মরক্ষা করার প্রচেষ্টায় আক্রমণকারীকে আহত বা, নিহত করা। কিন্তু, শব্দটির আগে ফেক জুড়লে পুরোটাই হয়ে যায় সাজানো। বিগত দু দশকে বছরে আমাদের দেশে হওয়া এমন কিছু সন্দেহজনক এনকাউন্টার দেখা যাক এক ঝলকে।
বীরাপ্পন
২০০৪ সালের অক্টোবর তামিলনাড়ুর স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স চন্দন দস্যু বীরাপ্পনকে এনকাউন্টার করে। সালেমে চোখের চিকিৎসা করাতে যাওয়ার সময় তার অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া করে ৩৩৮ রাউন্ড গুলি করে তাকে মারা হয়। প্রশ্ন ওঠে অতো গুলি করা সত্ত্বেও বীরাপ্পনের চোখ ও কপাল ছাড়া কোথাও গুলি লাগেনি কেন?
ইশরত জাহান
২০০৪ সালের ১৫ই জুন গুজরাট পুলিশ আহমেদাবাদ শহরতলিতে ১৯ বছরের ইশরত জাহান এবং তিনজনকে এনকাউন্টার করে। গুজরাট পুলিশের তরফে দাবী করা হয় ওরা লস্কর-ই-তইবার যুক্ত ছিল এবং তারা লিপ্ত ছিল গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার করার একটি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে।
কিন্তু, গুজরাট হাই কোর্টের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল জানায় এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। এরপর এই কেস সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া হয়, যার ফলে সিবিআই তদন্তে নামে ও একাধিক গুজরাট পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের হয়।
সোহরাবুদ্দিন শেখ ও তুলসীরাম প্রজাপতি
২০০৫-এর নভেম্বরে গুজরাত পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গিয়েছিল সোহরাবুদ্দিন শেখ। গুজরাত পুলিশের দাবী ছিল, সোহরাবুদ্দিনের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার যোগাযোগ ছিল এবং সে লিপ্ত ছিল গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হত্যার করার একটি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে।
যদিও সিবিআই তদন্তে সামনে আসে অন্য তথ্য। আদালতে পেশ করা বক্তব্যে সিবিআই জানিয়েছিল, ‘‘হায়দরাবাদ থেকে মহারাষ্ট্রের সাংলি যাওয়ার পথে সোহরাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী কওসর বাঈকে অপহরণ করে গুজরাত পুলিশ। চার দিন পর আমদাবাদে ভুয়ো এনকাউন্টারে সোহরাবুদ্দিনকে হত্যা করে গুজরাত পুলিশ। আরও দু’দিন পর নিখোঁজ কওসরকে ধর্ষণের পর খুন করা হয় গুজরাতের বনসকন্থা জেলায়। পরের বছর গুজরাত-রাজস্থান বর্ডারে গুলি করে খুন করা হয় সোহরাবুদ্দিনের সহযোগী তুলসীরাম প্রজাপতিকে। ’’
ভূপাল জেল এনকাউন্টার ২০১৬
সিমির সঙ্গে যুক্ত আটজন ভূপাল সেন্ট্রাল জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের এনকাউন্টার করা হয়। তদন্তে বলা হয়, তাদের আত্মসমর্পণ করতে বললে তারা পুলিশ ও জনসাধারণকে লক্ষ্য করে গুলি করে এবং তারপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
এরপর অনেক ভিডিও বেরোয় যা দেখে মনে হতে পারে পুরোটাই সাজানো। তাছাড়া প্রশ্ন ওঠে জেল থেকে পালালে কে তাদের খাবার, জামাকাপড় দিল? কেই বা তাদের অস্ত্র দিল?
হায়াদ্রাবাদের সম্ভাব্য ধর্ষক
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ ও জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত চারজনকে তেলেঙ্গানা পুলিশ এনকাউন্টার করে। পুলিশ ঐ অভিযুক্তদের নিয়ে ছতনপল্লী গ্রামের পাশের হাইওয়েতে ক্রাইম সিন রিকন্সট্রাক্ট করতে নিয়ে যায়। পুলিশ দাবী করে ঐ চার অভিযুক্ত সেই সময় পালানোর চেষ্টা করে ও পাথর বৃষ্টি করার ফলে তাদের এনকাউন্টার করা হয়।
বিকাশ দুবে
শুরুটা হয়েছিল বিকাশ দুবের মামা প্রেমপ্রকাশ পাণ্ডেকে দিয়ে। তার পর একে একে অতুল দুবে, অমর দুবে, প্রভাত মিশ্র, প্রবীণ ওরফে বৌবা দুবে। পুলিশের সঙ্গে একের পর এক এনকাউন্টারে মৃত্যু হয় গ্যাংস্টার বিকাশের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের। ফলে বিকাশকে নিয়েও আশঙ্কাটা ছিল। কিন্তু, গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই যে সেই আশঙ্কা বাস্তবের চেহারা নেবে, এমনটা বোধহয় বুঝতে পারেনি বিকাশ নিজেও। তবে সেই এনকাউন্টারেই বিকাশের মৃত্যু হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে।