পাইলট বনাম গেহলট, রাজস্থানে রাজনৈতিক সংকট
রাজস্থানে রাজনৈতিক সংকট ক্রমশই বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে মধ্যপ্রদেশে যেভাবে কংগ্রেস বিধায়কদের পদত্যাগ করিয়ে কংগ্রেস সরকার ফেলা হয়েছিলো সেই একই ছকে চলছে রাজস্থান এবং এক্ষেত্রে মধ্যপ্রদেশে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মত রাজস্থানে বিজেপির তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন শচীন পাইলট। নির্বাচিত সরকারের স্থিতি নষ্ট করার জন্য বিজেপি পাইলট গেহলট দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাচ্ছে বলেও তাঁদের অভিমত।
গতকালই রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ডাকা জরুরি বৈঠকে শচীন পাইলটের অনুগামী বিধায়করা যোগ দেননি। যা নিয়ে সন্ধ্যের পর থেকেই রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, শচীন পাইলট আপাতত ১২জন অনুগামী বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে আপাতত দিল্লিতে আছেন। যে ঘটনায় জল্পনা আরও বাড়ে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এই ঘটনায় মধ্যপ্রদেশের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন।
যদিও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দ্রুত এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং সাংসদ রাহুল গান্ধী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন। সোনিয়া গান্ধী জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখছে কংগ্রেস। সূত্রের খবর অনুসারে, মতানৈক্য দূর করতে সোনিয়া গান্ধী আজই দুই পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন। উল্লেখ্য প্রায় একইভাবে গত মার্চ মাসে ২২ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে কংগ্রেস ছাড়েন মধ্যপ্রদেশের দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। যে ঘটনায় মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকারের পতন হয়।
গত ২০১৮তে রাজস্থান বিধানসভার নির্বাচনের সময় রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের মূল দাবীদার ছিলেন শচীন পাইলট। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন প্রবীণ অশোক গেহলট। উপমুখ্যমন্ত্রী পদ এবং পাঁচ দফতর নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় শচীন পাইলটকে। অসন্তোষ থাকলেও সেই সময় তিনি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন। যদিও দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তাতে মেটেনি এবং বিগত সময়ে মাঝেমাঝেই সেই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। একইভাবে মধ্যপ্রদেশেও মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার থাকলেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সেইসময় দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হন কমলনাথ।
গতকালই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির বিরুদ্ধে সরকারের স্থিতি নষ্ট করার অভিযোগ এনেছিলেন। কংগ্রেস বিধায়কদের ১৫ কোটি টাকা করে দিয়ে সরকার ফেলে দিতে চাইছে বিজেপি বলেও তিনি অভিযোগ জানান। যে অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, কংগ্রেসের অন্তঃদ্বন্দ্বেই রাজস্থানে সংকট তৈরি হয়েছে। বিজেপি রাজস্থানে সরকার ফেলার চক্রান্তে নেই।
রাজস্থানের রাজনৈতিক সংকট প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ ওম মাথুর জানিয়েছেন – রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার যখন তৈরি হয়েছিলো তখন থেকেই সংঘাত ছিলো। শচীন পাইলট এবং অশোক গেহলটের মধ্যে দূরত্বের কারণেই এই সংঘাত এবং রাজনৈতিক সংকট। অন্যদিকে অশোক গেহলট অনুগামীদের পক্ষ থেকে সরাসরি শচীন পাইলট বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদিও শচীন পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে সংবাদমাধ্যম।
রাজস্থানের ২০০ আসন বিশিষ্ট বিধানসভায় বর্তমানে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা ১০৭। এছাড়াও ১২ জন নির্দল এবং পাঁচ অন্য দলের বিধায়কের সমর্থন আছে কংগ্রেস সরকারের ওপর। অন্যদিকে বিজেপি ও সহযোগীদের বিধায়ক সংখ্যা ৭২ ও ৪। মোট ৭৬।