হেমতাবাদ ঘটনার প্রতিবাদে, মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ বনধের ডাক দিল বিজেপি
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ বনধের ডাক দিল বিজেপি। হেমতাবাদের দলীয় বিধায়ককে খুনের অভিযোগেই আগামিকাল উত্তরবঙ্গ বনধ ডেকেছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গে বিজেপির আহ্বায়ক রাজু বন্দ্যোপাধ্য়ায় বিধায়ক মৃত্যুর ঘটনার সুবিচারের দাবিতে বনধের ডাক দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে রায়গঞ্জ থানার বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের বালিয়াদিঘী গ্রামে একটি বন্ধ দোকানের বারান্দার সিলিং থেকে হেমতাবাদের বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। বিধায়কের আত্মীয়ের অভিযোগ, রাত ১টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে খুন করে দেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকালে তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন।
বিধায়কের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগারওয়াল বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোন যোগ নেই। পুলিশ তদন্ত করলে আসল রহস্য সামনে আসবে।’ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী।
এদিন হেমতাবাদের বিজেপির বিধায়ক দেবেন রায়ের মৃত্যুর খবর শুনেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা। সঙ্গে নিয়ে আসা হয়েছে পুলিশ কুকুর। এরপর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়েই খোঁজখবর নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
মৃতের বাড়িতে যান বালুরঘাটের বিজেপির সাংসদ সুকান্ত মজুমদার, মালদার বিজেপির সাংসদ খগেন মুর্মু, বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তাঁদের দাবি দেবেন রায়ের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত করা হোক। দলীয় সূত্রে খবর, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের রায়গঞ্জে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘটনার পর থেকেই গ্রামীণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিজেপি। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তার মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য ক্রমশ জটিল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দলীয় বিধায়ককে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।’ তিনি একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
প্রয়াত দেবেন রায়ের স্ত্রী চাঁদিমা রায় বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন। একমাত্র কিশোরী কন্যা বৃষ্টি বাবার মৃত্যুর খবর শুনে মর্মাহত। বিধায়কের স্ত্রী চাঁদিমা রায় বলেন, ‘রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল আমার স্বামী। দুষ্কৃতীরা মুখ বন্ধ করে স্বামীকে অপহরণ করে খুন করেছে।’ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করার দাবিতে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গ্রামীণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান দলীয় কর্মীরা। এলাকায় মোতায়েন করা হয় কয়েকশো পুলিশবাহিনী ও কমব্যাট ফোর্স। বিজেপির জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী বলেন, ‘তাঁকে খুন করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হবে না।’ নেতার মৃত্যুর খবর শুনেই হাজার হাজার মানুষ এলাকায় জমায়েত হয়েছেন।
এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মৃতের জামার পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে, যাতে দু’জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রাজ্য়পাল। বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ধাপাচাপা দিতে চাইছে পুলিশ, এমনই অভিযোগ রাজ্যপালের।
সোমবার টুইটে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘পুলিশ বিধায়কের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দিতে চাইছে। বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করাতে হবে। পাশাপাশি ময়নাতদন্তের ভিডিওগ্রাফিও করতে হবে।’ ঘটনার তদন্তে তিনি স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন।