উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

জলবন্দি জলপাইগুড়ি

July 13, 2020 | 3 min read

কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টিতে শহরের কিছু এলাকা আদেই জলমগ্ন হয়ে গিয়েছিল। এ দিন রাতে জল ঢোকে দিনবাজারের মাছবাজার, সব্জিবাজার সংলগ্ন এলাকা ও সমাজপাড়া এলাকায়। সেখানে কোথাও কোথাও জল বাড়িতেও ঢুকে গিয়েছে। জল ঢুকেছে গুদামঘরেও। অনেক দোকান প্লাবিত। ব্যবসায়ীরা রাতেই জিনিসপত্র সরাতে শুরু করে দিয়েছেন। নদীর পাশে সমাজপাড়া এলাকাগুলিতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের অনেকে সংসারের জিনিসপত্রও সরাতে শুরু করেছেন। অনেকে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

এদিকে শহর জলবন্দি হতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডল বলেন, “অপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার জন্য এক রাতের বৃষ্টিতে শহরের বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দি হয়েছে।” যদিও পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “নিকাশি নালার কোনও সমস্যা নেই। শহর ও সংলগ্ন এলাকার সমস্ত নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। নিকাশি নালা দিয়ে দ্রুত জল বাইরে যেতে পাড়ছে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে পুরসভার সমস্ত দফতরকে সতর্ক করা হয়েছে। দ্রুত ত্রাণ শিবির খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”

জলপাইগুড়ি শহর ও সংলগ্ন এলাকা রবিবার সকাল থেকেই জলবন্দি ছিল। পাকা সড়কও নদীর চেহারা নিয়েছে। এদিকে বাজ পড়ে জখম তিস্তা বাঁধে আশ্রিত চার মহিলাকে এদিন সকালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জলস্তর বেড়ে চলায় সেচ দফতরের তরফে তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত এবং তিস্তার সংরক্ষিত এলাকা ও জলঢাকা নদীতে হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। ছোট নদীগুলিও ফুঁসে উঠেছে। তিস্তা নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের কর্মীদের উদ্ধার কাজে নামানো হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে বাঁধ ভাঙলো ডুয়ার্সের মেটেলি ব্লকের কুর্তি নদীর। রবিবার সকাল থেকেই কুর্তি নদী ফুঁসতে থাকে। বিধাননগর গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার নদী বাঁধে ভাঙন হয়। দুপুরের মধ্যেই ২০মিটার বাঁধ ভেঙে বিছাডাঙা গ্রামে ঢুকে পড়ে নদীর জল। গ্রামের শতাধিক বিঘার ধানের জমিতে জল ঢুকে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাসিন্দাদের। এলাকার ২৫টিরও বেশি বাড়িতে এদিন নদীর জল ঢুকে যায়। গ্রামে জল ঢোকার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন নাগরাকাটার কংগ্রেস বিধায়ক জোসেফ মুণ্ডা। তিনি বাসিন্দাদের ত্রাণও জলবন্দিদের মধ্যে বিলি করেন। রবিবারের টানা বৃষ্টিতে নাগরাকাটা বাজার লাগোয়া সুভাষপল্লি, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ লাগোয়া এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ ঘন্টায় হাসিমারায় ২৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, আলিপুরদুয়ারে ৩২ মিলিমিটার ও বানারহাটে ২৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। রাতে হাসিমারা ভোলা নালার জল বেড়ে হাসিমারা থেকে কালচিনি যাওয়ার রাজ্য সড়কে একটি কালভার্ট ধসে গিয়েছে। এলাকায় যান চলাচল বন্ধ। কালচিনি ব্লকের পানা নদীতে জল বাড়ায় সেন্ট্রাল ডুয়ার্সের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জয়ন্তী এলাকায় বালা নদীর জলও বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে।

জলপাইগুড়ির মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “একটানা বৃষ্টির জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল ইতিমধ্যে তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় কাজ শুরু করেছে।” শনিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে বিরামহীন ভারী বর্ষণ। রবিবার সকাল পর্যন্ত তা চলেছে। বৃষ্টির জলে বন্দি হয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের পাণ্ডাপাড়া, নিউটাউন পাড়া, তরুণদল, ডাঙাপাড়া, মোহন্তপাড়া, নয়াবস্তি, রেসকোর্স পাড়া, অশোকনগর, নেতাজিপাড়া, ঘোষপাড়া, কংগ্রেসপাড়া, টোপামারির বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও এক হাঁটু আবার কোথাও এক কোমর জল দাঁড়িয়েছে। সকালে শহরের ডিবিসি রোডের উপর দিয়ে জলের স্রোত বয়ে যেতে দেখা যায়। একই পরিস্থিতি ছিল কদমতলা, টাউন ষ্টেশন, পোস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকার। বেলা বাড়লেও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। রাতে জল উপচে যায় করলায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#jalpaiguri, #Flood

আরো দেখুন